ছড়া পাঠের সময় ছন্দ, মাত্রা, অন্তমিল এসব হিসাব করে কি কেউ পড়ে? আসলে এগুলো এমনই একটি বিষয় যে, ছড়াটি পাঠ করতে যদি ভালো লাগে তবে এসবই ঠিক আছে বোঝা যায়। অনেকটা শরবতের মধ্যে চিনি যেমন অদৃশ্য হয়ে থাকে ঠিক ছড়ার মধ্যে ছন্দ, মাত্রা, অন্তমিলগুলো অদৃশ্য হয়ে থাকে। বাংলা ভাষায় ছড়া চর্চার শিল্পী অগণিত রয়েছে; কিন্তু সবার ছন্দ, মাত্রা কিংবা অন্তমিল সঠিক হয় না। ফলে অনেকেই দীর্ঘদিন চর্চা করেও ছড়ায় সফল হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে মানিক লাল সাধু একজন সফল ছড়াকার বলা যায়। তিনি অনেক শিশু-কিশোররেই প্রিয় ছড়াকার তার ছড়ার গুণে। ‘টিয়ে পাখির বিয়ে’ তার একটি উল্লেখযোগ্য ছড়ার বই। ২৪ পৃষ্ঠার এ বইটিতে ১৭টি ছড়া রয়েছে। চড়–ইভাতি, টিয়ে পাখির বিয়ে, গণিত শেখা, খুকি আর মেঘ, ঘোড়ার ডিমের গল্প, কাশফুল, শরতের দিনে, নাচ, আহŸান, বৃষ্টির দিনে, খেলাসহ আরো বেশ কিছু ছড়া রয়েছে বইটিতে। ‘টিয়ে পাখির বিয়ে’ ছড়ায় ছড়াকার মানিক লাল সাধু লিখেছেন― ‘টিয়ে পাখির বিয়ে হবে টোপর মাথায় দিয়ে বনের সকল পাখি যাবে বরকে সাথে নিয়ে। বুলবুলিতে মিষ্টি নেবে ফিঙে ধরবে ছাতি চড়–ই পাখি দারুণ খুশি চড়বে সেতো হাতি।’ এই ছড়াটির মানেই ছড়াকার বইটির নামকরণ করেছেন। পাখির বিয়েতে অন্য পাখিরা কে কী করবে তা নিয়েই এ ছড়ার বিস্তার। খুবই মজাদার আর আনন্দের এই ছড়াটি। ‘গণিত শেখা’ নামে একটি ছড়া আছে বইটিতে। বাচ্চারা অন্য সব শিখতে চাইলেও গণিত শেখার প্রতি তাদের ভয়! শিশু শিক্ষার্থীদের একটি উপযুক্ত ছড়া এটি। এই ছড়াটি মুখস্থ হয়ে গেলে এক থেকে দশ পর্যন্ত গোনাও শিখে যাবে সহজেই। রয়েছে ‘মাছধরা’ শিরোনামে একটি ছড়া। এ ছড়ায় ছড়াকার লিখেছেন― ‘মাঠের মাঝে হাঁটুজলে মাছ কিলবিল করে ছেলে-বুড়ো সবাই মিলে গামছায় মাছ ধরে। কেউবা ধরে লাফ দিয়ে মাছ কেউবা ধরে হাতড়ে কেউবা ধরে পলো দিয়ে অমবস্যার রাত্রে।’ মাছ ধরার এমন দৃশ্য এখন আর খুব একটা দেখা যায় না। কেননা রাস্তাঘাট, বাজার-বাড়ি প্রচুর বেড়ে যাওয়াতে জলাশয়গুলো মরে যাচ্ছে! ফলে মাছের থাকার জায়গাও কমে যাচ্ছে। শুধু ভালো না; খুব ভালো এই ছড়ার বইটি সংগ্রহ করতে ভুল না হয় যেন।
জন্ম ২৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯, শরীয়তপুর জেলার সদর উপজেলার কাশিপুর হিন্দুপাড়া গ্রামে। তিনি কম্পিউটার সায়েন্সে সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ "আলোর মিছিল" ২১ শে বইমেলা ২০১৬ তে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সনাতন ধর্ম বইয়ের উপর লেখালেখি করে থাকেন। তাঁর দ্বিতীয় বইটি শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জীবনী।