১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সকালে সেনাসদরে ‘‘ডালিমের চিৎকার আর স্টেনগানের কড়াক শব্দে এমন ভয়ঙ্কর পরিবেশের সৃষ্টি হলো যে, যেসব অফিসার নুরউদ্দীনের কামড়ায় জড়ো হয়ে কান পেতে রেডিও শুনছিল, তারা কোনো কিছু না বুঝেই মহাবিপদ আশঙ্কায় পড়িমরি করে যে যেদিকে পারলো প্রাণ নিয়ে দিলো ছুট। এক নিমেষে ১৫/২০ জন অফিসারের জটলা সাফ! তড়িঘড়ি করতে গিয়ে কেউ চেয়ার উল্টালো, কেউ অন্যজনকে মাড়ালো, একজন তো আস্ত টেবিলই উল্টে ফেলে দিল। তোপের মুখে পড়ে মোমেন যখন আমতা আমতা করে কিছু বলছিল, সেই ফাঁকে সুযোগ বুঝে পিলারের আড়াল থেকে আমিও দিলাম ভোঁ দৌঁড়।” (তিনটি সেনা অভ্যুথান ও কিছু না বলা কথা: লে. কর্নেল আব্দুল হামিদ (অব) পিএসসি; পৃ. ৪১-৪২) ২৯ অক্টোবর রাত ১১টায় জিয়া আমাকে তার অফিসে ডাকলেন। ডেকে আমাকে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন, প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার সুন্দরী স্ত্রীর সঙ্গে মেজর শাহরিয়ার অশালীন ব্যবহার করেছে। জিয়া বললেন, ‘এরা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি করছে। ট্যাংকগুলো থাকাতেই ওদের এতো ঔদ্ধত্য।’ (একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর, কর্নেল শাফায়াত জামিল; পৃ. ১৩২) ‘দেশে সরকার নেই, সেনাবাহিনীতে চেইন অফ কম্যান্ড বিধ্বস্ত- এমন অবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। মনে হচ্ছিল সমগ্র দেশ কয়েকজন মেজরের হাতে জিম্মি আর সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসাররা নির্বিকার চিত্তে, ভয়ে অথবা হাসিমুখে তাদের এই চরম স্বেচ্ছাচারিতা সহ্য করে যাচ্ছিলেন। সামান্য প্রতিবাদ করার সাহস কেউ করেননি। বিড়ালের গলায় কেউই ঘণ্টা বাঁধতে সাহস পাচ্ছিলেন না। এমতাবস্থায় স্কোয়াড্রন লিডার লিয়াকত আলী খানের নেতৃত্ব এবং পরিকল্পনায়’ জীবনবাজি নিয়ে মোশতাকের অবৈধ সরকার’কে উৎখাতের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হাতেগোনা কয়েকজন বৈমানিক/কর্মকর্তা/বিমানসেনা! ৩ নভেম্বর সকালে মিগ যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টারের গর্জনই ছিল ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রথম সফল সরব প্রতিরোধ। এই বইয়ে মোশতাকের অবৈধ সরকারের পতনের সাথে সরাসরি জড়িত বিমানবাহিনীর সেই সকল বৈমানিকের সাক্ষাৎকার এবং তাদের নিকট থেকে জানা সেই দিনের সকল ঘটনাবলির অবিকৃত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সেই দিনের রোমাঞ্চকর অভিযানের সত্য ঘটনাবলি গত ৪৮ বছর ধরে সমগ্র জাতির কাছে রয়েছে অজানা। আসুন তাদের কাছ থেকেই জেনে নেই সেই দিনের আজানা কাহিনি!
Title
পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর অংশগ্রহণকারী বৈমানিকদের বর্ণনায় বিমান বাহিনীর ভূমিকা
নাজমুল আহসান শেখ ব্রাক, বি ইউ পি এবং আরো কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসাবে এম বি এ’তে চারটি বিষয়ে ক্লাস নিয়ে থাকেন। লেখক নাজমুল আহসান শেখ স্কুল জীবন থেকেই স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে প্রচণ্ড আগ্রহী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুলের ছাত্র হওয়ায় অতি অল্প বয়সেই ৬৯ এর গণ—অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করেন। ১৫ই আগস্টে শহীদ বেবী সেরনিয়াবাত লেখকের সহপাঠি ছিলেন। ১৫ই আগস্টে শহীদ শেখ রাসেলও ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুলের ছাত্র ছিলেন। পারিবারিক/ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় কর্নেল তাহেরের প্রতিবেশী হিসাবে বসবাস করার কারণে অল্প—বয়সেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। শিক্ষা জীবন : ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুল, নটরডেম কলেজ, বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং—এ গ্রাজুয়েশন, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইকাটো, নিউজিল্যান্ড থেকে এম বি এ ডিগ্রি অর্জন করেন। অস্ট্রেলিয়ায় বিনিয়োগ ব্যাংকার হিসাবে কাজ করলেও, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার কাজে কখনোই ছেদ পড়েনি। ৭ই নভেম্বরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা লেঃ কর্নেল হায়দার বীর উত্তম এবং একমাত্র বেসামরিক শহীদ বীর উত্তম খাজা নিজামুদ্দিন ভুঁইয়ার আত্মত্যাগ নিয়ে লেখক অনেক কাজ করেছেন। ‘১৯৭১ ভেতরে বাইরে সত্যের সন্ধানে’ এবং ‘পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর অংশগ্রহণকারী বৈমানিকদের বর্ণনায় বিমান বাহিনীর ভূমিকা’ লেখকের প্রকাশিত এবং সচেতন পাঠকের কাছে সমাদৃত বই হিসাবে পরিগণিত হয়েছে।