ফ্ল্যাপে লিখা কথা প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য এবং চিত্রশিল্পে ফোকলোর : বাঙালির হৃদয়-উৎস ড. রহমান হাবিব-রচিত ‘প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য এবং চিত্রশিল্পে ফোকলোর : বাঙালির হৃদয়-উৎস’ গ্রন্থটিকে আশরাফ সিদ্দিকী ‘একটি অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন গ্রন্থ’ বরে মন্তব্য করেছেন। এই গ্রন্থটির বিশেষত্ব এখানেই যে, প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলাসাহিত্যের প্রধান সাহিত্যকর্মে এবং চিত্রশিল্পের মধ্যেও ফোকলোরের উপকরণসমূহ কীভাবে বাঙালির ইতিহাস পুনর্নিমাণে এবং সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতির একরৈখিক অন্যায় আধিপত্যকে প্রতিহত করতে পারে সে বিষয়টি এতে অন্তর্দৃষ্টিতে মূল্যায়িত হয়েছে। বাংলাদেশের ফোকলোরকে গ্লোবাল অ্যাপ্রোচে মূল্যায়ন করতে গিয়ে এই গ্রন্থে লেখক বিশ্বের খ্যাতনামা ফোকলোরিস্টদের ভাবনাভাষ্যকে ব্যবহার করেছেন। ‘রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, আশুতোষ ভট্রচার্য, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ বিশিষ্টজনদের ফোকলোরিক দূরদর্শিতার কথাও তিনি বাঙালির ফোকলোরকে Philosophize করার জন্যে এই গ্রন্থে তাৎপর্যপূর্ণভাবে সন্নিবেশিত করেছেন” বলে ড. আশরাফ সিদ্দিকী এই গ্রন্থের ভূমিকায় মত প্রকাশ করেছেন। গ্রন্থটিতে চর্যাপদ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, বৈষ্ণপদাবীল চণ্ডীদাস এবং মুসলিম পদকর্তাদের পদভাষ্যের আধ্যাত্নরূপসহ আলাওলের পদ্মাবতী, মুকুন্দরামের কালকেতু উপাখ্যান, ভারতচন্দ্রের মানসিংহ ভবানন্দ উপাখ্যান, ময়মনসিংহ গীতিকা মহুয়া, চন্দ্রাবতী, দেওয়ানা মদিনা, মলুয়া ও ঢাকার লোকাহিনীর লোকদর্শন সমেহত বাংলা বাগধারা ও প্রবাদের লোকভাষা বিজ্ঞান সম্পৃক্ততা এবং বাঙালির চিত্রশিল্পে ফোকলোর প্রয়োগের অন্তর্মানসের প্রতিস্বিকতাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। গ্রন্থটি প্রসঙ্গে ড. আশারাফ সিদ্দিকীর মন্তব্য স্মতব্য : ‘বাঙালির সাঙ্গীতিক ও আখ্যানগত বুদ্ধিবৃত্তিক লোকপ্রণোদনা, বাস্তবতাবোধ, আধ্যন্তবোধ ও নৈতিকতার অনুষঙ্গ তিনি এই গ্রন্থে উপস্থাপন করেছেন।’ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক প্রফেসর কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার জনাব আবু তাহের মজুমদার ড, রহমান হাবিব কে দেশের একজন প্রথম সারির লেখক বলে অবিহিত করে একজন নিষ্ঠাবান ও নিবেদিত স্কলার হিসেবে ড.রহমান নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন বলে মন্তব করেছেন। ড, রহমান হাবিব-এর ‘রবীন্দ্রকাব্যের ধ্রুপদী দর্শন’ গ্রন্থ সম্পর্কে চিন্তাবিদ আবুল কাসেম ফজলুল হক এর মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য : ‘রহমান হাবিব নিজের মূল্যবোধ ও বিচার ক্ষমতার অবলম্বনে সঞ্চয়িতা র প্রাসঙ্গিক কবিতাসমূহে রবীন্দ্রনাথের আস্তিক্যচেতনা, ঈশ্বর বিশ্বাস, ভাববাদ ,সদর্থক বক্তব্য ও আশাবাদকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা সুখপাঠ্য এবং পড়ে দেখার মতো।’
Title
প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য এবং চিত্রশিল্পে ফোকলোর বাঙালির হৃদয় উৎস
রহমান হাবিব-এর ‘আল মুজাহিদী: মৃত্তিকার কবি গ্রন্থটি হাজার বছরের বাংলা কবিতার ইতিহাসঐতিহ্য-সংস্কৃতি-ধর্ম-নৃতত্ত-রাজনীতি ও সমাজ - প্রভৃতি বিষয়ের প্রজ্ঞাগত সংশ্লেষণকে সামগ্রিকতার দর্শন হিসেবে মূল্যায়নের প্রয়াস। উল্লেখ্য যে, বাঙালির কাব্যদর্শনভাবনার অনুচিন্তনকে উভয়বঙ্গে এভাবে কেউ ইতিপূর্বে আলােকপাত করেননি। কবিতার আবেগ, অনুভূতি, প্রেম ও নিসর্গচেতনার সঙ্গে জীবনের বহুরৈখিক বিষয়ব্যাপ্তির প্রাজ্ঞতার দর্শনকে এ গ্রন্থে নবতর দৃষ্টিতে উপস্থাপনের প্রচেষ্টা চালানাে হয়েছে । চর্যাপদের কবিতা থেকে শুরু করে মধ্যযুগের কবিতাসহ উনিশ শতকের আধুনিক কবিতার পথ-পরিক্রমা পার হয়ে বিশ শতকের ত্রিশের দশকের বৈশ্বিক কাব্যচেতনামূলক কবিতাসমেত বাংলাদেশের চল্লিশ থেকে আশির দশকের কবিতাসহ গত শতাব্দীর নব্বই দশকের কবিতার সংক্ষিপ্ত রূপরেখাভিত্তিক পর্যালােচনা সম্পৃক্ত জীবনের বহুমুখী প্রজ্ঞাচেতনার সামূহিকতার দর্শনকে এ গ্রন্থে পর্যবেক্ষণ করা কয়েছে । ষাটের দশকের কবি আল মুজাহিদীর কবিতায় মৃত্তিকা, স্বদেশ, নারীচেতনা, সমাজ-রাজনীতি-সংস্কৃতি ও নৃতত্ত্ববােধ, নান্দনিকতা, নৈতিকতা, ইহলৌকিকতা এবং স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসসহ সত্যের প্রতি অবিচলতা এবং মানবের সম্ভাবনার প্রতি ইতিবাচক আশ্বস্ততা অভিব্যক্ত হয়েছে। তাঁর কবিতার সে দৃষ্টিভঙ্গিসমূহকে দর্শনভাবনার সম্পৃক্ততায় এ গ্রন্থে নিরীক্ষা করা হয়েছে। যে কোন শিল্পীর দর্শন মূলত মৃত্তিকা ও মানবকে কেন্দ্র করেই বিনির্মিত হয় । কবি আল মুজাহিদীর কবিতার দর্শন মৃত্তিকানির্ভর বলেই গ্রন্থের উপযুক্ত নামকরণ।