কীর্তিমান বাঙালি অমর্ত্য সেন তাঁর জীবনের উৎসভূমি হিসেবে বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলা উভয়কেই বোঝেন। তাঁর বাল্যকাল কেটেছে ঢাকায়, যে স্মৃতি তিনি কখনো ভোলেন নি। দেশের বাড়ি মানিকগঞ্জের মত্ত গ্রাম ও বিক্রমপুরের সোনারঙের সঙ্গে রয়েছে মায়ার বন্ধন। পুরান ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি, বাল্যজীবনের আরেক অংশ কেটেছে শান্তিনিকেতনে, রবীন্দ্র-আদর্শ লালিত শিক্ষাপল্লীতে। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে এরপর তিনি হলেন বিশ্বপথিক, কেমব্রিজ ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে পেশাগত জীবনে অসাধারণ মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বিশ্ববরণ্যে অর্থনীতিবিদ হিসেবে অনন্য খ্যাতি অর্জন করেন। দারিদ্র নিয়ে তাঁর গবেষণা ও রচনাদি প্রকৃত অর্থে ছিল দারিদ্র্য-দূরীকরণে বাস্তব করণীয় নির্ণয়ের চেষ্টা। উন্নতিকে নিছক প্রবৃদ্ধির ছকে ফেলে বিচারের গণ্ডিবদ্ধতা মোচন করে সামাজিক বিকাশের মাপকাঠিতে দেখার নবচিন্তার তিনি অন্যতম উদ্যোক্তা ও বিশ্লেষক। উন্নয়নের অর্থনীতিতে মানবিক চিন্তাদর্শন যোগ করে তিনি এক যুগান্তের সূচনা করেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী ‘এ মেমওয়ার : হোম ইন দা ওয়ার্ল্ড পাঠের সূত্রে অমর্ত্য সেনের জীবন ও কৃতি নিয়ে সহজ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ চিত্তাকর্ষক জীবনকথা প্রণয়ন করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ও লেখক আব্দুল বায়েস। অমর্ত্য সেনের অসাধারণ ভাষা ও চিন্তার গভীরতা স্বাদু, সরল ও ব্যতিক্রমী বাংলায় এই উপস্থাপনা পাঠকদের জন্য হবে একদিকে মুগ্ধকর, অন্যদিকে চিন্তা-জাগনিয়া। অমর্ত্য সেনের কর্ম ও চিন্তার পরিচয়সহ তাঁর জীবনে বাংলাদেশের উজ্জ্বল উপস্থিতি প্রাঞ্জলভাবে মেলে ধরেছেন লেখক। অনন্য এক ব্যক্তিকে ঘিরে ব্যতিক্রমী এই গ্রন্থ পাঠকচিত্ত আলোকিত ও আন্দোলিত করবে নিঃসন্দেহে।
আব্দুল বায়েস। জন্ম ১৯৪৯ সালে চাঁদপুরে। দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং পরবর্তীকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থনীতির ওপর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১২।। এছাড়া আন্তর্জাতিক জার্নালে একাধিক মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে যা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। অর্থনীতির বাইরেও নানা বিষয় নিয়ে তিনি দেশের জাতীয় দৈনিকগুলােতে প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে থাকেন। ব্র্যাকের গবেষণা মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। লেখালেখি, বইপড়া, ভ্রমণ আর গান শুনে সময় কাটে।।