বাংলাদেশের একজন বাঙালি হিসেবে আমাদের সবচেয়ে গর্বের বিষয় হলো মুক্তিযুদ্ধ। কেননা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। খন্দকার মাহমুদুল হাসান মুক্তিযুদ্ধের সত্য কাহিনি নিয়ে লিখেছেন ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনো’ নামের এ গল্পের বইটি। গল্পগুলো পড়ার সময় একাত্তরের আগুনঝরা দিনের ছবি ভেসে উঠবে চোখের সামনে। গল্পগুলোর পরতে পরতে আছে আবেগ-উত্তেজনা। আছে জীবন বাজি রাখা মুক্তিযোদ্ধাদের দুঃসাহসী অভিযানের কাহিনি। ১৬০ পৃষ্ঠার এ বইটিতে আছে ছোট-বড় ১১টি গল্প। সূচিবদ্ধ গল্পগুলোর নাম হলো―মতি ভাই, রাতটা ছিল ভয়ংকর, পতাকার অন্তু, লিটুর স্বপ্ন, সোনার ছেলে, সোনার চেয়ে দামি, যুদ্ধ, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, নতুন দিন, দুঃসাহসী মুক্তিসেনা ও সুন্দরবনের যুদ্ধ। বইয়ের প্রথম গল্পটি একটি মর্মান্তিক গল্প। আমাদের স্বাধীনতার পেছনে কত মানুষের যে কত ত্যাগ তা বলে শেষ করার মতো নয়। মুক্তিযোদ্ধারা যখন পাক হানাদার বাহিনির ক্যাম্প আক্রমণ করে দখল করে নেয় তখন তারা দেখতে পায় হাত বাঁধা অবস্থায় মতি ভাইয়ের নিথর দেহ। মুক্তিযোদ্ধারা কী জবাব দেবে মতির মায়ের কাছে! শত চেষ্টা করেও তো আর মতিকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে না তারা। কারো ভাই, কারো বোন, কারো মা, কারো বাবা অথবা কারো সন্তান হারোনোর গল্প এগুলো। গল্পগুলো কিশোরদের উপযোগী করে লেখা হয়েছে, যাতে তারা বুঝতে পারে আমাদের স্বাধীনতার কত মূল্য, কত ত্যাগ আর কত রক্তের বদলে একটি লাল সবুজ পতাকা আমরা পেয়েছি। খন্দকার মাহমুদুল হাসান নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। ফলে তার অভিজ্ঞতাগুলো খুবই বাস্তব ও জীবন্ত। গল্পের কাহিনি সাজাতে গিয়ে তাই তাকে খুব বেশি কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়নি। প্রতিটি নাম, স্থান, ঘটনা তার চোখের সামনেই ঘটেছে। ফলে গল্পগুলোর অনুভ‚তিও আলাদা। বইটি প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রতিটি কিশোর-কিশোরীর পাঠ্য হওয়া দরকার এই কারণে যে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হয়ে এ দেশের সঠিক সত্য ইতিহাস জানা থাকা খুবই জরুরি। বইটি যেকোনো অনুষ্ঠানে উপহারের জন্য দেওয়া যেতে পারে। এ বইয়ের বেশ কয়েকটি গল্প বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এ ছাড়া প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায়ও। ২০২০ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে প্রকাশিত এ বইটির বাঁধাই এবং মুদ্রণ খুবই উন্নতমানের।
জন্ম ১৯৬৮ সালে পহেলা মে [সার্টিফিকেট অনুসারে] বৃহত্তর বরিশালের পিরোজপুর জেলার ভানডারিয়া উপজেলার বোথলা গ্রামে, প্রমত্ত কচানদীর পারে। শৈশব থেকে লেখালেখির শুরু।