এই ছড়ার বইটির শিরোনাম খুবই কৌশলী একটি নাম। ‘ছড়াগুলো আমার’ অর্থাৎ যে বইটি পড়বে ছড়াগুলো তার। কী মজার ব্যাপার! শিকদার সা’দ মুহাম্মদের লেখা বইটিতে রয়েছে ১৩টি ছড়া। ছড়াগুলো শিশুদের উপযোগী করে লেখা। প্রতিটি ছড়া চার লাইনের। চার লাইনের হলেও এই ছড়াগুলোর বিষয়-বৈভব এত মনোমুগ্ধকর যে এর আবেশ দীর্ঘক্ষণ মনের মধ্যে অনুরণন সৃষ্টি করে। প্রথমেই পাঠ করা যাক কয়েকটি ছড়া। ‘মাঠ ভরা ধান’ ছড়ায় লিখেছেন― মাঠ ভরা ধান/চাষি করে গান ছোট জামা গায়/চিড়া মুড়ি খায়। আবহমান বাংলার একটি চিরায়ত রূপ-ঐতিহ্যকে কী স্বল্প পরিসরে নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই ছড়াটির মধ্য দিয়ে। ছন্দের সূ² ব্যবহার আর শব্দের সুষম বণ্টনে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র এই ছড়াটি। বৃষ্টি একটি আনন্দের নাম। বৃষ্টি এলে মনে জাগে নানা রকম আশা, স্বপ্ন। সেই বৃষ্টি নিয়ে রয়েছে ‘আষাঢ়ের বৃষ্টি’র ছড়া― টুপটুপ ঝুপঝুপ/সবকিছু চুপচুপ আষাঢ়ের বৃষ্টি/আহা! কী যে মিষ্টি। ‘বর্ষা’ নামে রয়েছে আরেকটি ছড়া। একটি মেয়ের নাম বর্ষা। বৃষ্টিরই সমার্থক শব্দ হলো বর্ষা। সেই ছোট্ট সোনামণি বর্ষাকে নিয়ে রয়েছে বর্ষার ছাড়া। মেয়েটির ডাকনাম বর্ষা/দেখতে সে খুব বেশি ফর্সা খায় বেশি ছানা দই মিষ্টি/ভালোবাসে আষাঢ়ের বৃষ্টি। ১৬ পৃষ্ঠার এ বইটি সম্পূর্ণ রঙিন। প্রতিটি ছড়ার সাথে রয়েছে হাতে আঁকা দারুণ সব ছবি। ছবি আর ছড়ার জাদুতে সব ভুলে মেতে ওঠার উপলক্ষ এ বইটি। বাংলার প্রকৃতি নদী বিল পাখি আর ফলের সমারোহ দেখা যায় এ ছড়ায়। ছড়ার মধ্যে আদেশ আছে, নিষেধ আছে, ভালোবাসা আর ভালো লাগার বিষয় আছে। গ্রামের বাড়ি, দাদু আর যদু সিংও রয়েছে। পড়াশোনর জন্য দেওয়া হয়েছে উৎসাহমূলক ছড়া। আধো আধো কথা বলতে পারা শিশুটির মুখের ভাষাই যেন এই ছড়া। ‘আমার বাড়ি’ ছড়ায় ছড়াকার শিকদার সা’দ মুহাম্মদ যেন নিজের বাড়ির পরিচয়ই দিয়ে দিলেন ছন্দে ছন্দে― আমার বাড়ি মোল্লাহাট/মধুমতি নদীর ঘাট নদীর জলে চিতল মাছ/ঘুঙুর পায়ে খুকুর নাচ। উপহার হিসেবে এমন ছড়ার বই পেলে খুকুমণিরা সবচেয়ে বেশি খুশি হবে। আর শিশুদের খুশি দেখতে কে না চায়। তাই ওদের হাতে তুলে দিন এমন একটি অসাধারণ ছড়ার বই।