বাংলা ভাষা বিকাশ লাভ করেছে কবিতার মধ্য দিয়ে। মানুষ তার আবেগ-অনুভ‚তি প্রকাশ করতে গেলেই মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয় কবিতাকে। তাই বাংলা কবিতার ইতিহাস সুদূরপ্রসারী। বাংলা কবিতা অনেকেই লিখেছেন। কিন্তু কবিতা হিসেবে সেটা কতটা উত্তীর্ণ হয়েছে তার মান বা মাপ অনেক ক্ষেত্রেই করা হয়নি। আসলে সারা পৃথিবী জুড়ে এত কথা, এত বাক্য ইথারে ইথারে ঘুরে বেড়ায় যে আমরা তার অনেক কিছুই শুনতে পাই না। এক বা একাধিক মানুষের সাথে যখন কাছাকাছি হয়ে কথা বলি সেগুলোই কেবল আমরা শুনতে পাই। তেমনি আমার বাছাই করা কবির কবিতার বইটি যখন পড়ি তখন সেই কবির কবিতাই আমরা বুঝতে চেষ্টা করি। ‘অতীন্দ্রিয় জ্যোৎস্নায়’ তেমনি একটি কাব্যগ্রন্থ, যেটি আপনি একান্তে পাঠ করে কবিকে বুঝতে পারবেন। এই কাব্যগ্রন্থের কবি হলেন ইসমাত মির্যা। কবি হিসেবে ইসমাত মির্যা একটি উজ্জ্বল নাম। ১১২ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থে রয়েছে ১০৩টি কবিতা। কবিতার বিষয় নানা রকম হতে পারে। কবিতা অভিজ্ঞতা আর আত্মার উপলদ্ধির প্রকাশ। ফলে একজন কবির বিষয় কী হবে তা আগে থেকেই নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না। বইটির প্রথম কবিতার নামেই বইটির নামকরণ করা হয়েছে। নাম কবিতায় কবি ইসমাত মির্যা লিখেছেন ‘ভাবের গভীর দেশে ব্যথাময় সুরে এসেছিলে; সময়ের যৌবন কত রঙে এঁকেছিল ছবি, কত সুর জেগেছিল হৃদয়ের শত ঝঙ্কারে, ভুল করে চলে গেছো অনুভবে পাবার আগেই ‘অঙ্কুরেই বিনাশ’-এর মতো প্রেমের স্মৃতি আর অনুভ‚তির এক শৈল্পিক প্রকাশ দেখা যায় এই কবিতায়। না পাবার যে বেদনা, হাহাকার ও শূন্যতা কবিতাকে করে তোলে আরো বেশি মর্মস্পর্শী। কবিতা কি শুধু প্রেমেরই ফসল? কবিতা কি শুধু না পাওয়ারই প্রকাশ? কবিতায় কি আশা নেই? স্বপ্ন নেই? নেই হৃদয়ের উষ্ণতা? অবশ্যই আছে। আসলে সময় এমনই এক সাধক যে কবিকে দিয়ে একেকটি অনুভ‚তির নির্যাস বের করে নেয়। ঝরে পড়া বৃষ্টিও ফিরে আসে মেঘ হয়ে আকাশের বিশাল বাসায়; ঝরে পড়া পাতাটাও পাতা পচা সার হয়ে ফিরে যায় গাছের দেহে, বস্তু তো অবিনশ্বর! তুমি তো বস্তু বটে নিশ্চই তুমিও অমর। ‘বেঁচে রয়’ কবিতায় এই দার্শনিক প্রজ্ঞা কিন্তু এক দিনে আসেনি। জীবনের বিচ্ছেদ-ব্যথার এক সান্ত¡নাবাণী যেন এ কবিতা। নানা জ্ঞান, নানা মত, প্রকৃতি, দেশ ও মাটি সংলগ্ন এ কবিতার বইটি কবিতার পাঠকদের আরো নিবিষ্ট করবে কবিতার প্রতি।