‘ছিন্নপত্র’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১২ সালে, ১৩১৯ বঙ্গাব্দে। রবীন্দ্রনাথের লেখা ১৫১টি চিঠি সংকলিত হয় এ বইয়ে। এর ভিতরে ১৪৩টিই তিনি লিখেছিলেন তাঁর ভাইঝি ইন্দিরাকে। মেজো ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন আই সি এস (ইণ্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্রিটিশ আমলা, ইন্দিরা (১৮৭৩-১৯৬০) তারই কন্যা। বারো বৎসরের বয়ঃকনিষ্ঠা এই ভ্রাতুস্পুত্রী তাঁর বিশেষ প্রিয় ছিল। কবির প্রথম বিলেত বাসের সময়ে (১৮৭৮-এর অক্টোবর থেকে ১৮৮০-র ফেব্রুয়ারি) ইন্দিরা ছিলেন। পাঁচ-ছ’ বছরের ছােট মেয়ে। অনুমান করতে অসুবিধে হয় না, কবির কোলে-পিঠে চড়ে তখন। ঘুরে বেড়িয়েছে এই শিশু। তাকে তিনি ব’ নামে ডাকতেন। ‘ছিন্নপত্র’তেও তার প্রমাণ ছড়িয়ে আছে। ইন্দিরা দেবী তার কাকার লেখা এই চিঠিগুলি । একটি খাতায় কপি করে রাখতে থাকেন। খাতায় সংরক্ষিত মোট ২৫২টি চিঠি একত্র করে কবির মৃত্যুর অনেক বছর পরে ১৯৬০ সালের অক্টোবরে ‘ছিন্নপত্রাবলী’ নামে গ্রন্থ প্রকাশ করে বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগ। কবির জীবদ্দশায় বইটি ‘ছিন্নপত্র’ (১৫৩টি চিঠির সংকলন) নামেই প্রকাশিত ও পরিচিত ছিল। বর্তমানে ‘ছিন্নপত্র’ ও ‘ছিন্নপত্রাবলী’ উভয় গ্রন্থই চালু আছে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি, সমাজ-সংস্কারক এবং দার্শনিক। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে কলকাতার ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিমনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই মানেই এক মোহের মাঝে আটকে যাওয়া, যে মোহ পাঠককে জীবনের নানা রঙের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয় নানা ঢঙে, নানা ছন্দে, নানা সুর ও বর্ণে। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তিনি একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা দুই-ই ছিলেন। কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া তিনি চিত্রাংকনও করতেন। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। আজও আমাদের বাঙালি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে বিশ্বকবির সাহিত্যকর্ম।