সপ্তম শতকের প্রথম অধ্যায়ে হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর ইসলামী বিশ্বাস, অপূর্ব মননশীলতা ও আল্লাহর প্রতি অকুণ্ঠ আচরণজনিত ক্রিয়াকলাপ, অসামান্য মাহাত্ম্য সর্বোপরি মানব মুক্তির ব্যবস্থাপনা রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে সংঘটিত হয়। তাঁর ধর্ম প্রচারের অসাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল আল্লাহর একত্ব প্রকাশে, মানব চরিত্র গঠনে এবং মানব জাতির কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন আপোষহীন। তিনি পবিত্র কুরআনের ধারায় মানুষকে পরিচালিত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। হযরত আলী (রা.) ও হযরত মুয়াবিয়া (রা.) মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলাকালে ইসলামে শাস্ত্রীয় বিরোধের উদ্ভব হয় এবং যারা এই বিরোধকে তুলে ধরেন তারা খারেজী বলে অভিহিত হন। এই ভাবে পর্যায়ক্রমে মুতাজিলা, জাহানিয়া, নাজারিয়া, যিয়ারিয়া মতবাদের উদ্ভব ঘটে। এই ভাবে জাবারিয়া ও কাদারিয়া মযহবের জন্ম লাভ করে। এই ভাবে আশআরী সম্প্রদায়, শিয়া মযহব এবং মুরজায়ীদের উদ্ভব হয়। ফলে, পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা স্বরূপ আল্লাহর নবীর মুখনিসৃত বাণী (হাদীস) সংগ্রহের জন্য গুরুত্ব পায়। দ্বিতীয় হিজরীতে ইমাম আবু হানীফা (রহ.) (মৃত্যু ১৫০ হি/৭৬৫ খ্রি.), ইমাম মালিক (মৃত্যু ১৭৯ হি/৭৯৪ খ্রি.), ইমাম শাফেয়ী (মৃত্যু ২০৪ হি/৮১৯ খ্রি.) এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (মৃত্যু ২৪১ হি/৮৫৬ খ্রি.) এই চারজন মুজতাহিদ তাঁদের যুক্তিপূর্ণ ইজতিহাদ দ্বারা মুসলিম জাতিকে গভীরভাবে প্রভাবান্বিত করেছিল। মুসলিম সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির সাথে সাথে ও আব্বাসীয় খিলাফতের যুগে ধর্ম ক্ষেত্রে, মুতাজিলা সম্প্রদায়ের সূক্ষ্ম যুক্তিবাদ, সুফি মতবাদের প্রেক্ষাপটে এবং গ্রিক দর্শনের প্রভাব বলয়ের মোহাচ্ছন্নতায় মুসলমানগণ কুরআন ও সুন্নাহর প্রকৃত অবস্থান থেকে সরে আসলে এই চার ইমামদের অনুসৃত নীতিকে গ্রহণ করে মুসলিম জাহান নিরাপত্তা খুঁজে পেতে চেয়েছিল। ফলে, তাঁদের উপর নেমে আসে রাজন্যবর্গের নির্মম অত্যাচার। কিন্তু তাঁদের মানসিক দৃঢ়তা ও অসীম সাহস আজো ইতিহাসের আলোতে সমুজ্জ্বল। হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ইমামে আযম আবু হানীফা (রহ.) ইরাকের কুফা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। মুসলিম ঐতিহাসিক আল্লামা আব্দুল কাদের কুরশী (রহ.) এবং আল্লামা মোল্লা আলী আল-ক্বারী আল হানাফী (রহ.) ইমামে আযমের (রহ.) জন্ম ৮০ হিজরীতে হয়েছিল বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আল্লামা যাহিদ কাউসারী (রহ.) এবং সূত্র বর্ণনাকারীগণ বলেছেন তাঁর জন্ম হলো ৭০ হিজরী। ইমামে আযমের (রহ.) নাম নু'মান, উপনাম আবু হানীফা। তাঁর পিতার নাম ছিল সাবিত ইবনে যুতী (রা.)। ইতিহাসবেত্তাগণ একমত যে তিনি পারস্যের রাজপরিবারের একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ইমামে আযমের (রহ.) দাদা যুতী (রা.) ছিলেন কাবুলের অধিবাসী। ইতিহাস প্রসিদ্ধ মুজতাহিদ ইমামদের সকলের আগে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা সাবিত (রা.) মহামতি হযরত আলীর (রা.) সাহচর্য লাভ করেছিলেন। বস্তুত ইমামে আযম একজন তাবিঈ ছিলেন। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) শিশুকালেই পবিত্র কুরআন হেফজ করেন।