জীবজগতের মধ্যে মানুষ সবচেয়ে সম্মানিত সৃষ্টি (বনু ইস্রাঈল-মাক্কী ১৭/৭০)। তাই অন্যান্য প্রাণী নগ্ন দেহে থাকলেও মানুষ থাকে সর্বদা পোষাকাবৃত। প্রাণীকুলকে আল্লাহ নর ও নারীতে বিভক্ত করে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য পরিপূরক এবং উভয়ে উভয়ের প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট। উভয়ের মিলনেই মানুষের বংশ বৃদ্ধি হয়। যদিও উভয়ের দেহ সৌষ্ঠব, রুচি ও আচরণ পৃথক। আর এই পার্থক্যের কারণেই তাদের পোষাকও পৃথক। একটি ছোট্ট শিশুও এ পার্থক্য বুঝে। দেখা যায়, তিন বছরের ছোট্ট কন্যা শিশুটি তার সমবয়সী যমজ ভাইয়ের পোষাক পরে না। আবার ভাইটিও তার বোনের পোষাক পরে না। মেয়েটি সর্বদা খেলনা দিয়ে ঘর সাজায়। অন্য দিকে ছেলেটি ঘর-বাড়ি দাপিয়ে বেড়ায়। মেয়েটি মায়ের আঁচলে মুখ লুকায়। ছেলেটি বাপের সাথে বাইরে যাবার জন্য ব্যাকুল হয়। মেয়েটি রান্নার হাড়িপাতিল নিয়ে ব্যস্ত। ছেলেটি গাড়ীর খেলনা নিয়ে বিভোর। এই ঘরমুখী ও বহির্মুখী স্বভাবগত পার্থক্য উভয়ের মধ্যে সারা জীবন থাকে। এই পার্থক্যকে সামনে রেখেই তাদের পোষাক ও পর্দা নির্ধারিত হয়। পরিশেষে ‘হাদীছ ফাউণ্ডেশন’ গবেষণা বিভাগ এবং তার সহযোগী ও সংশি−ষ্ট সকলকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। স্ব স্ব ইখলাছ অনুযায়ী আল্লাহ তাদেরকে উত্তম পারিতোষিক দান করুন! সেই সাথে দীন লেখকের ও তার মরহূম পিতা-মাতা এবং সৎকর্মশীল পরিবারবর্গ ও সন্তান-সন্ততিদের জন্য অত্র লেখনী পরকালীন নাজাতের অসীলা হৌক, এই প্রার্থনা করছি- আমীন!
বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারী সাতক্ষীরার বুলারাটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ আলী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন বিখ্যাত আহলে-হাদিস আলেম ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং জামালপুর থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান যথাক্রমে ১৬তম ও ৫ম হয়ে। অতঃপর তিনি কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং খুলনার সরকারি মজিদ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পিএইচডি গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অর্জন করলেও পরবর্তীতে আর যাননি। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে খন্ডকালীন লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগ থেকেই ২০১৬ সালে অবসর নেন। তিনি লেখালেখি করেন রাজনীতি, অর্থনীতি্ সাহিত্য, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘আহলে-হাদীস আন্দোলন-বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান আমীর। মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমূহ মূলত ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়, আহলে-হাদীস আন্দোলন, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামি খেলাফতের প্রাচীন ও বর্তমান অবস্থার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক পেশাগত কাজে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে। পাঠক সমাদৃত মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমগ্র হলো ‘আহলে হাদীস আন্দোলন কী ও কেন’, ‘জীবন দর্শন’, ‘ইনসানে কামেল’, ’ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ‘তিনটি মতবাদ’ ইত্যাদি। ২০০০ সালে সৌদি সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজব্রত পালন করেন তিনি।