কবিয়াল আব্দুর রউফের গান ও কবিতাগুলো প্রধানতঃ গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার বিষয় নিয়ে, তাদের দৈনন্দিন কাজ-কর্ম ও আবেগ-অনুভূতি নিয়ে রচিত হয়েছিল। তাতে একদিকে যেমন আছে আবহমান বাংলার চিরসবুজ পরিবেশ, গাছ-পালা, নদ-নদী, মাঠ-ঘাট, পুকুর-দিঘী,ফসলাদি,পশু-পাখির কথা। তেমনি আছে এদেশের নর-নারীর আনন্দ-বেদনা, ধর্মানুরাগ, প্রেম-প্রীতি, বিরহ ও জ্বালা-যন্ত্রণার কথা। নববধু কিংবা বিরহীনি প্রসিতভতৃকার মনের কথা বনের কোকিল রূপী কল্পিত মাসুকের নিকট প্রকাশের বিষয়টি এই পল্লী-কবি মনোমুগ্ধকর ছন্দের মাধ্যমে বহুবার চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর গান ও কবিতা থেকে বুঝা যায়, বসন্তকালে মোহনীয় সুরে কোকিলের ডাক কবি আব্দুর রউফকে তাঁর প্রতিভা প্রকাশে বার বার আলোড়িত ও অনুপ্রাণিত করেছে। তৎকালে বাংলার এতদঞ্চলে (শৈলকুপা) প্রধানত হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে গান ও কবিতা চর্চা হতো। আব্দুর রউফের প্রধান পরিচিতি যে ‘কবিয়াল' সেটা তিনি কবিগান গাওয়ার কারনেই অর্জন করেছিলেন। কবিগান মূলত হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বন করেই রচনা ও গাওয়া হত। সেজন্য সংশ্লিষ্ট কাহিনী সম্বলিত বই-পুস্তক তিনি সংগ্রহ করেন এবং তাতে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। আব্দুর রউফের বহু সংখ্যক গান হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে রচিত হয়েছে। মুসলিমদের ইতিহাস ও কাহিনী অবলম্বনে তাঁর রচিত গানও রয়েছে। তবে সেগুলো সংখ্যায় কম। হিন্দুদের পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে সেসব গান রচিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে রাধা কৃষ্ণের প্রেম, প্রীতি,বিরহ ও লীলা, শ্রীরামচন্দ্র ও রাবণের কাহিনী তথা রামায়ন ও মহাভারতের কাহিনীসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর লীলা বিষয়ক গান। গানগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে বিভিন্ন ঘটনাবলীর বর্ণনা, নীতি কথা, কর্ম ও কর্মফলের কথা তেমনি কোন কোন গানের বিষয়বস্তু আদি রসে ভরপুর। আধ্যাত্মিক তত্ত্ব কথা, স্রষ্টা ও সৃষ্টির লীলা খেলা এবং সৃষ্ট জীবের অন্তর্নিহিত দোষ-গুণ নিয়ে তাঁর লেখা বেশ কিছু গান রয়েছে, যেগুলোকে মরমী বা ভাববাদী গান বলা চলে। মানব দেহ সৃষ্টি রহস্য, দেহ গঠন ও সঞ্চালন প্রক্রিয়া, বিশেষ করে মানবিক চাহিদা তথা কাম, ক্রোধ, লোভ ও লালসা বিষয়ক গান এবং সেগুলো সম্বরণে প্রয়োজনীয় সাধনা বিষয়ক বেশ কিছু মরমী গানও তাঁর রয়েছে। ঐসব আধ্যাত্মিক বিষয়ক গানগুলোর ভাষা ও ভাব পর্যালোচনা করলে তাঁকে একজন সূক্ষ্মদর্শী সমাজকর্মী, চিন্তাশীল পাণ্ডিত্যে ও দার্শনিকের সাথে তুলনা করা যায়।
ড. মোঃ আলমগীর ১৯৫৮ সালের ২০ মার্চ ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানাধীন নাগপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম মোঃ আবদুর রউফ ও মাতা বেগম সুফিয়া খাতুন। তিনি বিপ্রবগদিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৭৩ সালে এসএসসি, শৈলকুপা কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিঅল থেকে ১৯৭৮ সালে বিএ অনার্স ও ১৯৭৯ সালে এমএ পাস করেন। "বাংলার মুসলিমদের সমাজজীবনে ঢাকার নওয়াব পরিবারের অবদান" শীর্ষক অভিসন্দর্ভের প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ২০০০ সালে পি-এইচডি ডিগ্রী প্রদান করে। তিনি ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রেজিস্ট্রেশন অফিসার পদে যোগদান করেন এবং ১৯৮৯ সালে উক্ত জাদুঘরের একটি শাখা আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে উপ-কীপার পদে নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে কীপার (ডাইরেক্টর), সংরক্ষণ রসায়নাগার বিভাগ পদে কর্মরত আছেন। ড. মোঃ আলমগীরের অনেকগুলো গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশী ও বিদেশী জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ড. মোঃ আলমগীরের অনেকগুলো গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশী ও বিদেশী জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ