বিভীষিকাময় কোভিড-১৯-এর মহামারির কথা, যেখানে স্বাভাবিক জীবনযাপন ছিল শুধু একটা স্বপ্ন, বাস্তবতা ছিল নিদারুণ মর্মাহত। সাধারণ হাঁচি বা কাশি ছিল যেন যমদূত; পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন, একঘরে। একাকিত্ব-স্বজনহীন-মৃত্যুপথযাত্রী। তবুও মানুষ স্বপ্ন দেখেছেন বেঁচে থাকার, ছিল আকুলতা ব্যথাতুর আকাক্সক্ষা। আগে যেখানে মাঠ-ঘাট, বাজার, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ নানা শিল্পনগরী ও প্রতিষ্ঠান ছিল জনমানবপূর্ণ, সেখানে করোনা মহামারির ছোবলে তা পরিণত হলো জনমানবশূন্য মরুভূমিতে। যে যেখানে ছিলেন, সেখানেই অবস্থান করেছিলেন। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে; এক শহর থেকে অন্য শহরে; এক দেশ থেকে অন্য দেশে গমন ছিল নিষিদ্ধ। গাড়ি-ঘোড়া, লঞ্চ-স্টিমার সব ছিল বন্ধ। দিনকে দিন ফিকে হতে শুরু করল স্বাভাবিক জীবন-যাপন, কতটা অসহায় ছিলাম আমরা। অহংকার, দাম্ভিকতা সব যেন ধূলিসাৎ হতে শুরু করল। কর্মজীবী মানুষ বেকার হতে শুরু করল। অভাব-অনটন আর সংকোচ জীবনে মানুষ হয়ে গেল অভ্যস্ত ও বিধ্বস্ত। কী যেন নেই, শুধু নেই আর নেই। মানুষ হয়ে পড়ল নিঃসঙ্গ, উৎকণ্ঠিত। মানুষ মারা গেলে অন্য মানুষ পাশে দাঁড়ায়, জানাজায় আসতে মাইকিং করে শুভাকাক্সক্ষীদের জানানো ছিল একটা রেওয়াজ; পক্ষান্তরে করোনার এই মহামারিতে কেউ মারা গেলে তার জানাজা, কবরস্থ পাওয়া ছিল যেন ভাগ্যের ব্যাপার। এই কোভিড সময়ে যখন অনেকের নিকট আত্মীয় স্বজন (স্ত্রী, সন্তান) নিজের জš§দাতা পিতা/মাতার নিকটে যেতে ভয় পেতেন, তার বিপরীতে কিছু মানুষ (চিকিৎসক) আছেন, যারা অসুস্থ ব্যক্তিকে পিতৃস্নেহ দিয়ে আরোগ্য করে তুলতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছেন। হাজারো চিকিৎসক, নিজের পিতা/মাতাকে সৃষ্টিকর্তার জিম্মায় রেখে কোভিড ডিউটি করে চলেছেন সমতালে। অসুস্থ হলেও দেখতে যাওয়ার সুযোগ নেই, অনেক চিকিৎসক নিজেও যে কোভিড আক্রান্ত। কোভিড এসে বুঝিয়ে দিয়ে গেল, চিকিৎসকগণ সামান্য ভালো আচরণ আশা করে রোগীর স্বজন হতে, বিনিময়ে অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থতার জন্য আত্মাহুতি দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। কোভিড সময়ে চিকিৎসকদের এই স্মৃতি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ''কোভিড যোদ্ধাদের স্মৃতিকথা''।