এডিটর’স নোট "বিষাদ-সিন্ধু"র নাম তো শুনছেন, কিন্তু পড়ছেন কি, এর আগে? যদি না পইড়া থাকেন, তাইলে নতুন কইরা পড়তে গিয়া অনেক কিছুই এইখানে খেয়াল করতে পারবেন। যেমন, ফার্স্ট কথা হইতেছে, এইটা হিস্ট্রি না, বরং হিস্ট্রিকাল ফিকশন, কাহিনি একটা। তো, অথেনটিসি খুঁজতে গেলে বিপদেই পড়তে হবে! সেকেন্ড হইতেছে, গদ্য-ভাষার বই হইলেও পুঁথির একটা সুর পাইবেন এইখানে। এবং এমনকি এইটাও বুঝতে পারবেন যে, ১৮৯১ সালে "আল্লাহ" লেখা যাইতো না, "সাহাবী" লেখা যাইতো না, [‘বিদেশি শব্দ’ ছিল অইগুলা! মানে, সাহিত্যের রিডার হিসাবে একটা ইমাজিনড শিক্ষিত হিন্দু-কমিউনিটিই ছিল, যারা বই পড়েন, এবং যাদেরকে বিদেশি মুসলমানি-শব্দ বুঝায়া বলা লাগতো;] "ঈশ্বর" "শিষ্য" লেখা লাগতো। মানে, একটা পুরান-টেক্সটরে এই সময়ের কনটেক্সটে নতুনভাবে পড়তে পারাটা তো দরকার আমাদের। ২. কিন্তু "বিষাদ সিন্ধু" আমাদের রিডিং লিস্টে অইভাবে নাই কেন? "বিষাদ সিন্ধু" নিয়া কোন সিনেমা/সিরিজ বানানোর কথা কেউ ভাবতে পারে নাই কেন? সমস্যাটা ঠিক কোন জায়গাটায়? মানে, এখন বানাইতে গেলে অনেকে এজিউম করতে পারেন যে "ইসলামিস্টদের" পক্ষ থিকা ঝামেলা হইতে পারে যে, এইখানে "প্রকৃত ইতিহাস" নাই। কিন্তু অইটা "সমস্যা" বইলা মনেহয় না আমার কাছে। ঘটনা বরং উল্টা। "ইসলামিস্টদেরকে" কোন না কোনভাবে চেতায়া দিতে পারাটাই "সেকুলার" আর্টের সাকসেস হইতে পারার কথা! কন্ট্রোভার্সিয়াল হইতে পারলে তো ২-৩টা প্রাইজ-টাইজও পাওয়া পসিবল, বিজনেসের কথা নাহয় বাদ-ই দিলাম। তবে "বিষাদ সিন্ধু" যতোটা না "ইসলামি" জিনিস, তার চাইতে অনেক বেশি পুঁথি-ট্রাডিশনের ঘটনা - এই আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা সবারই কম-বেশি থাকার কথা। আর্টের নামে কোন পলিটিকাল পারপাস সার্ভ না করতে গেলে সেই সমস্যা হওয়ার কথা না। কারণ 'বিষাদ সিন্ধু" অনেক দিন ধইরাই বাংলা-ভাষার একটা ক্ল্যাসিক জিনিস। যার ফলে, সমস্যাটা অন্য জায়গায়। "বিষাদ সিন্ধু" যে একটা আর্ট-মেটেরিয়াল সেইটা বাংলাদেশের আর্ট-মারানিদের পক্ষে ভাবাটাই আসলে পসিবল না! ইভেন এই ২০২৩ সালেও। মানে, ব্যাপারটা এইরকম না যে, জিনিসটারে চোখের সামনে রাইখাও দেখা হয় নাই, বরং "বিষাদ সিন্ধু"রে একটা ভিজুয়াল আর্ট হিসাবে কন্সট্রাক্ট করতে গেলে যেই দেখার নজর লাগে, সেই জায়গাটাই মিসিং! ("আঞ্চলিক ভাশার" বুলশিটগুলা দেখলেও ব্যাপারটা টের পাইবেন।) মনে হইতে পারে যে, আরেকটা আলিফ-লায়লা বানাবো নাকি! বা এর লগে মিল-মিশ দিয়া যদি লোকজন হাসি-ঠাট্টা করতে শুরু করে - অই ডরেই পেটের ভিতর পায়খানা কইরা দেয়ার কথা আলমগীর কবিরের ভাতিঝা, ভাইগ্নাদের। তো, এই কারণে "বিষাদ সিন্ধু" বাতিল হয়া যায় নাই। বরং আমরা যে ট্রাডিশনের জায়গাতে এই রিসোর্সগুলারে নিতে পারি নাই, সেইটা আমাদের ভিজুয়াল-আর্টের হিস্ট্রিরে আরো "গরিব"-ই বানায়া রাখছে আসলে।
(নভেম্বর ১৩, ১৮৪৭ - ১৯১২) ছিলেন একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক যিনি ঊনবিংশ শতাব্দাীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা গদ্যের ঊণ্মেষকালে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বিষাদ সিন্ধু নামক ঐতিহাসিক রচনার জন্য সপুরিচিত ও সাধারণ্যে জনপ্রিয়। তিনি তৎকালীন বৃটিশ ভারতে (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর লেখাপড়ার জীবন কাটে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে ফরিদপুরের পদমদীতে ও শেষে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। তিনি কিছুকাল কলকাতায় বসবাস করেন। মীর মশাররফ হোসেন তাঁর বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে আধুনিক যুগে মুসলিম রচিত বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন। সাহিত্যরস সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনায় তিনি বিশেষ কৃতিত্ব দেখান। কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস "বিষাদসিন্ধু" তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা। তাঁর সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করে। মীর মশাররফ হোসেন খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর একটি ছোট গ্রাম লাহিনিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির পদমদীতে অতিবাহিত করেন। তবে তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর বলে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়। কিন্তু কিছু গবেষক তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর বলে দাবী করেন। তিনি মীর মোয়াজ্জেম হোসেন (মুসলিম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি) এবং দৌলতুন্নেছার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র আঠার বছরে বয়সে তারঁ পিতৃবন্ধুর কন্যা আজিজুন্নেসার সাথে বিয়ে হয়। ১৯১২ সালে দেলদুয়ার এস্টেটে ম্যানেজার থাকাকালেই মীর মশাররফ হোসেন পরলোকগমন করেন। তাকে পদমদীতে দাফন করা হয়।