আমার স্যুটকেসটা দেআর্জেন্টিনা বড্ড দূরের দেশ। প্রায় কুমেরু মহাসাগরের তীর পর্যন্ত পৌঁছেছে তার সীমানা। তবুও বাঙালি পাঠকের কাছে সে দেশের অনুষঙ্গে সহজেই মনে আসে দিয়েগো মারাদোনা, বোর্খেস, কোর্তাসার, মার্তিন ফিয়েররো, ফকল্যান্ড আইল্যান্ড মানে Islas Malvinas দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনা দ্বৈরথ, রাজনীতিক এভা পেরনসহ বেশ কিছু নাম। সাহিত্যের জগতে বিংশ শতকের সবচেয়ে আলোচিত দুটি নাম খোর্খে লুইস বোর্খেস এবং খুলিও কোর্তাসার। দুজনেই নোবেল পদক পাননি এবং দুটি ক্ষেত্রেই বলা হয় সেটি নোবেল কমিটির লজ্জা। বোর্খেস তাঁর কবিতাসূত্রে বাঙালি পাঠকের কাছে পরিচিত হলেও কোর্তাসার একেবারেই প্রায় অনাবিষ্কৃত। রাজনৈতিক মতবাদসূত্রে কোর্তাসার বরাবরই বামধারায় বিশ্বাসী এবং আর্জেন্টিনা ও নিকারাগুয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। যদিও তাঁর Rayuela উপন্যাসটি ইংরেজি অনুবাদে যার নাম Hopscotch, সেটি বাঙালি পাঠক পড়েছেন। বলা হয়ে থাকে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যে ‘বুম’ যুগের সূচনা এই উপন্যাস বা বলা যেতে পারে অ্যান্টি-উপন্যাসটির হাত ধরেই। এই প্রান্ত-খোলা উপন্যাসটি নিয়ে হিস্পানিক জগতের পাঠকেরা সরাসরি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে থাকেন। একদল মনে করেন মার্কেসের Cien años de soledad উপন্যাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোর্তাসারের Rayuela। অন্যদল মার্কেসকেই শ্রেষ্ঠ বলেন। কোর্তাসারের গদ্যরীতি মূলত সুররিয়ালিস্টিক এবং মেটাফিজিক্স। নিজের লিখনশৈলী নিয়ে তিনি সারা জীবন নানারকম পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেছেন। সমালোচকরা মনে করেন আলোচ্য উপন্যাসিকাটিই ছিল তাঁর মহৎ সৃষ্টি Rayuela’র ভ্রুণ। স্প্যানিশ থেকে এই প্রথমবার উপন্যাসিকাটি বাংলায় অনূদিত হলো। সঙ্গে রইল প্যারিস রিভিউ পত্রিকাকে দেয়া কোর্তাসারের একটি সাক্ষাৎকারের ফ্রান্স নিবাসী অনুবাদক এমদাদ রহমানকৃত চমৎকার অনুবাদ।