ভূমিকা সম্মানিত শাইখ মুহম্মদ আলি আল হারাকান মহাসচিব, রাবেতায়ে আলমে ইসলামী মক্কা মুকাররমা। সমস্ত প্রশংসা সে মহান আল্লাহর যিনি সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। যিনি আসমান, জমিন এবং অন্ধকার ও আলোর সৃষ্টিকর্তা। আর আল্লাহ দুরূদ অবতীর্ণ করেন রাহমাতুল লিল আলামীন মুহম্মদ আ এর ওপর, যিনি আখেরী নবী এবং নবী ও রাসূলগণের সরদার। তিনি সত্য ও সৎকর্মের জন্য খোঁজ-খবর প্রদান করেন এবং অসত্য ও অসৎকর্মের জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন, তিনি ওয়াদা করেন এবং অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর মাধ্যেমে বনী আদমকে পথ ভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করেন এবং সঠিক সরল পথে চলার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। আসমান ও জমিনের যেখানে যা কিছু রয়েছে সব কিছুকেই আল্লাহর দিকে প্রতবর্তিত হতে হবে। অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা নিজ রাসূল -এর প্রশংসিত স্থান এবং মুমিনের জন্য শাফায়াত করার মর্যাদা দান করেছেন। নবী করীম -এর সঙ্গে সকলের মহব্বত ও মর্যাদার সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং আদর্শের অনুসরণ করে চলাকে মহব্বতের চিহ্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কালামে মাজিদে যেমনটি বর্ণনা হয়েছে। قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ অর্থ : হে নবী! আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাও তবে আমার অনুসরণ করে চলো। আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। (সূরা আলে- ইমরান : আয়াত-৩২। এ জন্যই মানুষ তাদের অন্তরের সাথে নবী করীম -কে ভালোবাসার উদ্দেশ্যে ঐ সমস্ত পথ বা উপায় অন্বেষণ করতে থাতে যারআর-রাহীকুল মাখতুম মাধ্যমে তাঁর সাথে সম্পর্কটা অত্যন্ত গাঢ় হয়ে যায়। যেমন ইসলামের প্রারম্ভিক কাল থেকে মুসলমানগণ নবী করীম -এর গুণাবলি ও জীবন চরিত আলোচনা, রচনা, প্রকাশ ও প্রচারের জন্য একজন অপর জন থেকে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সথেষ্ট থাকেন। নবী -এর জীবন চরিত বলা হয় তাঁর কথা, কাজ এবং উত্তম চরিত্রকে। উম্মুল মুমিমীন আয়েশা (রা) বলেছেন, আসমানি গ্রন্থ আল-কুরআনই হচ্ছে তাঁর চরিত্র। আর এ মহাসত্যটি অবশ্যই সকলের জানা আছে যে, কুরআনুল কারীম হচ্ছে আল্লাহ তা'য়ালার কিতাব এবং তাঁর পাক ও পূর্ণাঙ্গ বাণীর নাম। অতএব যাঁর চরিত্র বা গুণাবলি হচ্ছে পুরো কুরআন তিনি অবশ্যই মানব কুলের মধ্যে সর্বোত্তম, পূর্ণাঙ্গ জীবনের অধিকারী এবং আল্লাহ তা'য়ালা সমগ্র সৃষ্টির সর্বাধিক মহব্বত লাভের সর্বোত্তম হকদার। মুসলমানদের অন্তর ও জীবনের মাকসাদ হিসেবেই উক্ত গভীর ভালোবাসা সর্বদা চিহ্নিত হয়ে এসেছে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে নবী করীম মান-এর জীবন চরিত বিষয়ে প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ সম্ভব হয়। ১৩৯৬ হিজরি সনে পাকিস্তানে উক্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রাবেতা উক্ত সম্মেলনেই ঘোষণা দেন, যে নিম্নোক্ত শর্তাদি সাপেক্ষে যাঁরা নবী -এর জীবন চরিত বিষয়ক গ্রন্থের উত্তম পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন করতে সক্ষম হবেন তাদের পাঁচ জনকে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার সৌদি রিয়াল পুরস্কার প্রদান করা হবে। শর্তগুলো হচ্ছে যথাক্রমে নিম্নরূপ— ১. বিষয়ের আলোচনা পূর্ণাঙ্গ, পরিপূর্ণ এবং সময়ের ক্রম অনুসারে ঐতিহাসিক ঘটনাবলি সুবিন্যস্ত হতে হবে । ২. আলোচনার মান অবশ্যই উৎকৃষ্ট হতে হবে এবং তা যেন ইতোপূর্বে প্রকাশিত কিংবা প্রচারিত না হয়ে থাকে তার প্রতি অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। ৩. বিষয়াদি আলোচনার সময় যে সকল সূত্র থেকে তা গৃহীত হয়েছে ঐ সকল সূত্রের বরাতগুলোর পুরোপুরি উল্লেখ করতে হবে।
আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরি (১৯৪৩-২০০৬) পুরো নাম সফিউর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আকবর ইবনে মুহাম্মাদ আলি ইবনে আব্দুল মুমিন মুবারকপুরি আযমি। তিনি একজন স্বনামধন্য ইসলামিক লেখক এবং ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত মুহাদ্দিস। তার লেখা রাসূল সা.-এর জীবনীগ্রন্থ আর-রাহিকুল মাখতুম সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহু ভাষায় অনুদিত একটি বই আধুনিক সিরাতগ্রন্থ। তিনি ১৯৪২ সালের ৪ জুন ভারতের আযমগড় জেলার হোসাইনাবাদের মোবারকপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি স্থানীয় শিক্ষকদের কাছে লেখাপড়া করেন এবং আরবী ভাষা, ব্যকরণ, সাহিত্য, ফিকাহ, উসূলে ফিকাহ, তাফসির, হাদিস ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি শরীয়াহ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন একই সাথে মাদরাসায় শিক্ষকতা এবং লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে মুবারকপুরের দারুত তালিম মাদরাসায় এবং ১৯৭৪ সালে বেনারসের জামিয়া সালাফিয়ায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৮ সাল হতে তিনি মদিনাস্থ আন্তজার্তিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাসূল সা. বিষয়ক গবেষণা ইন্সটিটিউটে কর্মরত থাকেন। সর্বশেষ রিয়াদের মাকতাবায়ে দারুস সালামে গবেষণার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া বেনারসের মাসিক মুহাদ্দিস পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছেন। আরবী ও উর্দু ভাষায় তাঁর রচিত গ্রন্থসংখ্যা ত্রিশোর্ধ্ব। ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর জুমাবার বেলা দু’টায় এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে এই মহান মনীষী মাওলার সান্নিধ্যে চলে যান।