ফ্ল্যাপে লিখা কথা ভারতীয় ধর্ম, দর্শন ও জীবনধারার ওপর রচিত বারোটি প্রবন্ধের সঙ্কলন গ্রন্থ এটি। লেখক তাঁর বিগত পঁচিশ বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে এ প্রবন্ধগুলো বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। প্রথম প্রবন্ধে লেখক ভারতীয় দর্শনের সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও গতি প্রকৃতির ওপর আলোকপাত করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে এখানে তিনি ভারতীয় দর্শনের উৎপত্তিকাল নির্ণয়েও একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছতে চেয়েছেন। দ্বিতীয় প্রবন্ধে তিনি ভারতীয় দর্শনের উৎপত্তি ও বিকাশে প্রাকবৈদিক ও বৈদিক উভয় উপাদানই সমানভাবে কার্যকরী। তৃতীয় প্রবন্ধে বৈদিক সাহিত্যের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। চতুর্থ প্রবন্ধে ধর্ম ও নৈতিকতা বিষয়ে লোকায়ত চার্বাক মত ব্যাখ্যাত হয়েছে। পঞ্চম প্রবন্ধে ভগবান বুদ্ধের মানবতাবাদের বিভিন্ন দিক লেখক তুলে ধরেছেন। ষষ্ঠ থেকে দশম প্রবন্ধে লেখক ভারতীয় ধর্ম, দর্শন ও জীবনধারার অন্যতম উৎস শ্রীমদ্ভগবদগীতার দার্শনিক ও নৈতিক নির্যাস অনুপম ও অনবদ্যভাবে ব্যক্ত করতে চেয়েছেন। শ্রীগীতা যে ধর্মীয় হিতোপদেশে পরিপূর্ণ স্রেফ একটি ধর্মগ্রন্থই নয়, এতে যে মানবজীবনের দার্শনিক ও নৈতিকদিকের ওপরও সামষ্টিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে, উল্লিখিত পাঁচটি প্রবন্ধে লেখক এ সত্যই বিধৃত করেছেন। একাদশ ও দ্বাদশ প্রবন্ধ দুটি ভারতবর্ষের ঐতিহ্যশালী দর্শন বেদান্তের অন্যতম আকরগ্রন্থ ব্রহ্মসূত্রের ওপর রচিত।একাদশ প্রবন্ধে তিন ব্রহ্মর্ষি বাদরায়ণের ব্রহ্মসূত্রের রচনাকাল ও দর্শনচিন্তা নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করেছেন। ব্রহ্মসূত্রের উৎপত্তি ও রচনাকাল নিয়ে প্রতীচ্য ও ভারতীয় দার্শনিকদের মধ্যে যে বিতর্কঝটিকা প্রবহমান, সেই বিতর্কের সমাধান প্রসঙ্গে এখানে তিনি উভয় ব্যাখ্যার তুলনামূলক পর্যালোচনার মধ্যে প্রতীচ্য ব্যাখ্যার দুর্বলতা এবং ভারতীয় ব্যাখ্যার যৌক্তিকতা সম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছে। ব্রহ্মসূত্রের এই প্রথম চতুঃসূত্রীর মধ্যেই যে বেদ্ধান্ত দর্শনের শাশ্বত ঐতিহ্যের মর্মবাণী নিহিত, একথা নৈয়ায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করেছেন। ভারতীয় ধর্ম, দর্শন ও জীবনধারার ওপর রচিত ভারতীয় দর্শন ও সংস্কৃতি শীর্ষক এই গবেষণাধর্মী গ্রন্থটি শিক্ষার্থী, সাধারণ পাঠকসমাজ এবং জ্ঞানপিপাসু গবেষকবৃন্দের উপকারে আসবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।