গ্রন্থ প্রসঙ্গে কিছু কথা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞ বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের একটি নিষ্ঠুরতম, নৃশংসতম, বিভীষিকাময়, বর্বরোচিত ও মর্মন্তুদ হত্যাকান্ড। ১৫ আগস্টের সূর্য ওঠার আগেই বাঙালির স্বাধীনতার শত্রুরা বাঙালি জাতির পিতা, স্বাধীনতার স্বপ্নপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, দুই পুত্র শেখ কামাল ও শেখ জামাল, পুত্রবধূদ্বয় সুলতানা কামাল খুকু ও পারভীন জামাল রোজী, নিষ্পাপ ছোট্ট শিশু শেখ রাসেল এবং বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরসহ ১৮ জনকে সুপরিকল্পিতভাবে, ঠান্ডা মাথায় নিষ্ঠুরতার সাথে হত্যা করে। ১৫ আগস্ট '৭৫-এর সুবেহ- সাদিকের এ নির্মমতা ও সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ডের নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এরকম ঠান্ডা মাথায় মাত্র কয়েক ঘন্টায় একটি পরিবারের সবাইকে নির্মম নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার দৃষ্টান্ত আর দেখা যায় কারবালা প্রান্তরে এজিদ বাহিনী সংঘটিত ইমাম হোসেন (রা.) এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার ঘটনায় । কারবালা প্রান্তরে ৬১ হিজরির ১০ মহররম এজিদ সীমার বাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানায় ১৫ আগস্ট ’৭৫ বাংলার শ্যামল প্রান্তরে সংঘটিত মোশতাক বাহিনীর নির্মম নিষ্ঠুরতা। বাংলার এজিদদের রক্তনেশা থেকে সেই কালরাতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের মাত্র দুইজন সদস্য শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা বেঁচে গিয়েছিল ভাগ্যচক্রে বিদেশে থাকার কারণে। পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর ঘাতকরা, জল্লাদ সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান, পাকিস্তানের ভুট্টোর মতো ষড়যন্ত্রীরা যাঁকে হত্যা করার সাহস করে নি, তাঁকেই নিহত হতে হলো স্বাধীন বাংলায় বাঙালি নামধারী আততায়ীদের হাতে। এসব কুলাঙ্গার ঘাতকরা আল্লাহকে ভয় করলে এমন নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটাতে সাহস পেত না। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একটি আদর্শের প্রতীক। তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা ছিল সেই আদর্শকে সমূলে বিনাশ করা। কিন্তু নির্বোধ আর মূর্খের দুঃসাহস বরাবরই বেশি থাকে । মূর্খতা ও মূঢ়তার বশবর্তী হয়েই খুনিরা সেদিন বাঙালিদের হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার এক দুঃস্বপ্ন দেখেছিল। ড. জাহিদুল ইসলামের লেখা ‘১৫ আগস্ট রক্তাক্ত শেষরাত' গ্রন্থের পান্ডুলিপি পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে গ্রন্থটির নামকরণ যথার্থ হয়েছে। লেখক তার লেখনীর মাধ্যমে ১৫ আগস্ট '৭৫ -এর ভয়াবহতা তুলে ধরে এই হত্যাযজ্ঞকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি করেছেন। আমিও ব্যক্তিগতভাবে তার এই দাবির প্রতি প্রত্যক্ষ সমর্থন জানাই। '১৫ আগস্ট রক্তাক্ত শেষরাত' গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে '৭৫ পরবর্তী প্রজন্ম সেই ভয়াল কালরাতের ইতিহাস জানতে পারবে। এই গ্রন্থটি পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া জাগাবে মর্মে আমি আশা প্রকাশ করছি। গ্রন্থটি লেখার জন্য লেখক ড. জাহিদুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানাই ।