উত্তর আফ্রিকার মুওয়াহহিদ সাম্রাজ্য মুরাবিত সাম্রাজ্যের একসাগর রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়; যে মুরাবিত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেছেন পৃথিবীখ্যাত বীর মুজাহিদ ও সুলতানরা। গ্রন্থটিতে মুওয়াহহিদ সাম্রাজ্যের বিস্তারিত ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। এতে তাদের সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ ইবনু তুমার্ত, তার ভ্রান্ত আকিদা এবং দাওয়াহর বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মসূচির বর্ণনা করা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে মুরাবিত সাম্রাজ্যে মুওয়াহহিদদের বিবাদের আলোচনা; তাদের হত্যাযজ্ঞ, রক্তপাত আর জনসাধারণের সম্মানহানির কথা। গ্রন্থটিতে মুওয়াহহিদ সুলতানদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরার পাশাপাশি মুওয়াহহিদ সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক আদর্শ ও রাজকীয় রীতিনীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মুওয়াহহিদরা কীভাবে ধীরে ধীরে তাদের ভ্রান্ত আকিদা থেকে সরে এসে সুলতান আবু ইউসুফ ইয়াকুব আল মানসুরের মতো মহান শাসকের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়, তারও বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর আপ্রাণ চেষ্টা ছিল তাদের আকিদা-বিশ্বাস আহলুস সুন্নাতের কাছাকাছি নিয়ে আসা। অবশ্য একসময় মুওয়াহহিদরা তাদের ভ্রান্ত আকিদা থেকে অনেকটাই সরে আসে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তাদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত, ক্ষমতার মোহ, সম্পদের লোভ আর বিলাসিতা ভর করে। দুনিয়ার অমোঘ বিধান হিসেবে লাঞ্ছনাকর পরাজয়ও ঘটে মুওয়াহহিদদের।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০