ইসলাম গ্রহণের ফলে ইরানী সংস্কৃতির সঙ্গে তুর্কীদের ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়। তুর্কীরা যখন উত্তর ভারতে একটি স্থায়ী সাম্রাজ্যের গোড়া পত্তন করে, তখন থেকেই এদেশে ইরানী কালচারের সূত্রপাত। এই সাংস্কৃতিক যোগাযোগের ফল ছিল ব্যাপক ও সুদূর-প্রসারী। প্রায় ছয় শ' বছর ধরে ফারসী দরবারি ভাষার মর্যাদা লাভ করে। আর এই সুদীর্ঘ কালের মধ্যে ফারসী ভাষার মাধ্যমেই ভারতের বিরাট ইতিহাস সাধনা গড়ে ওঠে। সৃষ্টিধর্মী সাহিত্য জগতেও একটা তুমুল আলোড়ন জাগে। তের-চোদ্দ শতকের সন্ধিক্ষণেই আমীর খুসরোর মত শক্তিশালী কবির আবির্ভাব তার প্রমাণ। আমীর খুসরোর কাব্য তখনকার দিনে ইরানেও সমাদর লাভ করে। ফারসী সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই সর্বব্যাপী বিস্তারের যুগেও প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক ভাষাগুলির গতি-প্রবাহ একেবারে রুদ্ধ হয়ে যায় নি। অমুসলমান কবি-সাহিত্যিকগণ আপন আপন মাতৃভাষায় সাহিত্য-চর্চা করেছেন। পনের শতক পর্যন্ত সে ক্ষেত্রে মুসলিম অবদান নিতান্তই পরিমিত। কারণটি সহজেই অনুমেয়। সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত লোকের ভাষা ফারসী। ফারসী না শিখলে তখন বৈষয়িক উন্নতির সম্ভাবনা কম ছিল; উপরন্তু সমাজের উচ্চস্তরের মুসলমান ভারতকে মাতৃভূমি বলে মনে করতে না পেরে ইরান-তুরান-আরবের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলত।