গল্প! মূলত আমরা বাস করছি গল্পের গোলকের মধ্যে। এমন কী গোলকটাও তৈরী গল্পের চন্দনগন্ধে। গল্পের এমন পৃথিবীর কারিগর সাহানা শিমু। অনেক বছর গল্প লিখছেন- জীবনের, অজীবনেরÑ দুটো মিলিয়েই গল্পের সম্ভার হাতের তারায় লাটিম খেলে। ‘সীমাবদ্ধতার সীমানা’ সাহানা শিমুর চতুর্থ গল্পবই। বইয়ের গল্প সংখ্যা দশটি। বোধ আর প্রতিজীবনের অক্ষ, গতিপথ, যন্ত্রনা, আবেগ, প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রলুদ্ধ মুখ, জিঘাংসার কালো চশমায় দেখা প্রতিদিন বা মূহুর্তের গল্পছবি লিখেছেন বা এঁকেছেন গল্পকার শিমু, নিজস্ব চেতনার রঙে পান্নার স্রোতে। প্রথম গল্প- যে প্রহরগুলো তখনও অন্তহীন। মূল চরিত্র জোবেদা। সন্তান না হওয়ার অপরাধে স্বামী বিয়ে করেছে। জোবেদা বের হয়ে চাকরিতে ঢোকে, পরিচয় হয় সনাতন ধর্মের রঞ্জন সাথে। ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলমান হয়ে নাম রাখে রহমত। সমাজ ও সংসারের বিচিত্র অভিঘাতে দুজনে গভীর মমতার সর্ম্পকের মধ্যে এগিয়ে গেলেও, যন্ত্রনা শুরু হয়ে রঞ্জনের মৃত্যুতে। রঞ্জনের বা রহমতের মৃত্যুর পর আগের স্ত্রীও ফিরে আসেÑ সৎকারের দাবীতে। ঘটনা গড়ায় আদালতে। মর্গে রহমতের লাশ! সৎকারের রায়ের অপেক্ষায় জোবেদা, কিন্ত জোবেদা নিজে যখন মৃত্যুর দরজায়, তখন? তখনই গল্প টার্ন নেয়, মুখোমুখি দূরত্বের... ভালোবেসে বিয়ে করেছে ত্রপা আর প্রিয়। দারিদ্রের মধ্যে, চিলেকোঠার সংসার- অসাধারণ সময় কাটছে। দুটি সন্তান তানিশা আর রূপম। কিন্ত যখন ধরা পড়লো- রূপম অটিস্টিক, তখনই পাল্টে যায় সকল মানচিত্র। প্রিয় সংসার থেকে ছুটে যায় অন্যকোথাও, অফিসে যাবার আগে শরীরে নতুন সুগন্ধি মাখে। ত্রপা বুঝতে পারে, ছন্দের ছন্দপতন ঘটছে। কিন্তু কে দায়ী এই পরিস্থিতির জন্য? সীমাবদ্ধতার সীমানায় দাঁড়িয়ে উত্তর পাওয়া খুব কঠিন। সেই কঠিনের গল্প সহজ করে লিখেছেন গল্পকার সাহানা শিমু- সীমাবদ্ধতার সীমানা, গল্পে মন যন্ত্রনার শিল নোড়ায়। প্রেম অনন্ত নেশার এক লাল গোলাপ। ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র বিজু বন্ধুর সঙ্গে এসেছিল কার্জন হলে। দূর থেকে দেখলো লম্বা এক শ্যামাঙ্গীকে। নাম তার কুমু। কুমুরা ছয় বোন, স্থির সিদ্ধান্ত পরিবারকে কোনো জটিলতায় ফেলা যাবে না। সুতরাং নো প্রেম! কিন্ত প্রকৃত প্রেমিক কী থেমে থাকে? অলটারনেট রিয়েলিটি গল্পে সাহানা শিমু নাটকীয় নৈপুণ্যে প্রেমের ফুল ফুটিয়েছেন। সাহানা শিমুর গল্পগ্রন্থ সীমাবদ্ধতার সীমানা সময়ের সীমানা অতিক্রম করে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করুক, এটাই প্রত্যাশা। কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার