কবিতা কবিতা নিয়ে কথা বলা যতো সহজ এর সংজ্ঞার্থ নির্ণয় করা ততটা সহজ কাজ নয়ম। কবিতা পছন্দ করে না পৃথিবীতে এরকম লোকের সংখ্যা খুবই কম। কবিতা সম্পর্কেযতো আলোচনা ও লেখালেখি হয়েছে, সাহিত্যের অন্য কোন রূপ সম্পর্কেতা হয়নি। প্রত্যেক সচেতন সংবেদনশীল মানুষের মধ্যেই কবিতার প্রতি আকর্ষণ রয়েছে। মানুষের বিস্ময়, স্মৃতি, স্বপ্ন, কল্পনার এক অপরূপ মিশ্রণে কবিতার সৃষ্টি। ব্যক্তির অনুভূতি, আবেগ, রহস্যানুভূতি প্রতিফলন ঘটায় প্রতিটি যথার্থ কবিতাই এক স্বতন্ত্র সৃষ্টি। যথার্থ বলার কারণ, অনেক অনুকারী কবিতা আছে যেখানে মৌলিক অনুভবের পরিবর্তেঅন্য কোন কবির অনুভূতি, আবেগ ও সৃষ্টিশীল কল্পনার প্রতিধ্বনিই মুখ্য হয়ে ওঠে। উপরের আলোচনা থেকে অনুমান করা সম্ভব যে, কবিতার সংজ্ঞার্থ নির্ণয় সহজ কাজ নয়। তবুও সাহিত্যের প্রতিটি শাখারই একটি মৌলিক মানদণ্ড আছে। সে মানদণ্ড বিচার করে কবিতা সম্পর্কেও একটা মোটামুটি ধারণা অর্জন করা যেতে পারে। বিশেষ অনুভূতি প্রকাশের জন্য শব্দগুচ্ছের তাৎপর্যময় বিন্যাস থেকে কবিতার সৃষ্টি। কিন্তু এ ধারণাও পূর্ণাঙ্গ নয়। আরো সুস্পষ্ট করে বলা যায় আবেগ, অনুভূতি, স্বপ্ন, কল্পনা প্রভৃতি ব্যক্তিমানসের সাধারণ প্রবণতার অংশ; এগুলোর সঙ্গে যখন সৃষ্টিশীলতা যুক্ত হয়, অনিবার্যশব্দের তাৎপর্যময় বিন্যাস তাকে করে তোলে ব্যঞ্জনাময়। তখনই একটি কবিতার জন্ম সম্ভব হয়। এ গ্রন্থেঅন্তর্ভুক্ত পাঁচটি কবিতার বিষয়বস্তু ও আঙ্গিকের বিশেষণ থেকে আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছার চেষ্টা করতে পারি। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বঙ্গভাষা’ কবিতার বিষয়বস্তু হচ্ছে মাতৃভাষাপ্রেম ও গভীর দেশাত্মবোধ। কবি সনেটের আঙ্গিকে নিজের জীবনেতিহাস পর্যালোচনা ও আত্মবিশেষণ থেকে মাতৃভাষার টানে স্বদেশ প্রেমে উজ্জীবিত হয়েছেন। চৌদ্দ মাত্রার চৌদ্দ চরণের সংক্ষিপ্ত পরিসরে অনিবার্য কিছু শব্দের বিন্যাসের মাধ্যমে কবি নিজ অনুভূতি, আবেগ, স্মৃতি, স্বপ্ন ও বাস্তব প্রাপ্তির পরিপূর্ণছবি তুলে ধরেছেন এই কবিতায়। ‘বলাকা’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ আবেগের বেগকে স্মৃষ্টিজগতের অন্তর্নিহিত অবিরাম গতির ছন্দে অনুভব করেছেন। এ-কবিতায় শব্দ-ব্যবহার ও ছন্দ-পরিকল্পনা কবির অনুভূত বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কাজী নজরুল ইসলামের ‘বাতায়ন পাশে গুবাক-তরুর সারি’ কবিতায় প্রেমচেতনা ও প্রকৃতিচেতনার অনুপম মেলবন্ধন ঘটেছে। ‘বনলতা সেন’ সম্ভবত বাংলা সাহিত্যের বহুল পঠিত কবিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম।