মহাকাব্যের যুগ অবসিত। তথাপি মহাকাব্য রচনার প্রবৃত্তি কবি হৃদয়ে নীরবে বাসা বাঁধে। এবং সে কারণেই কালের বুক চিরে বেরিয়ে আসে আখ্যান কাব্য রচয়িতা প্রতিভা। বাংলা সাহিত্যে তথা বিশ্ব সাহিত্যে দীর্ঘদিন ধরে মহাকাব্য রচিত হয়নি; মহাকাব্য রচনার কথা কবিরা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। অকস্মাৎ মহাকাব্যের অনুর্বর প্রাঙ্গণে আবির্ভূত হয়েছেন বাঙালি কবি যাযাবর ওসমান যিনি ইতিপূর্বে ইংরেজী ও বাংলায় প্রায় এক ডজন কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। ওসমানের অনেক ইংরেজী কবিতায় মহাকাব্যের সুর ঝঙ্কৃত। সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে তাঁর 'রাহুমুক্তি' মহাকাব্য রচনার মাধ্যমে। অমিত্রাক্ষরে লেখা এই বিশাল কলেবরের মহাকাব্যখানি রচিত হয়েছে পার্থিব উপাদানে-মানুষের স্বাধিকার, অধিকার, সুখ, দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে; এতে বিধৃত হয়েছে গণতন্ত্রের অমিয়বাণী, গণতন্ত্র পূজারীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা। গণতন্ত্রের মানসপুত্র নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চিত্রিত করা হয়েছে এই কাব্যের নায়ক হিসাবে। ভিলেন হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে তদানীন্তন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি এবং সামরিক জান্তার অধিনায়ক জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে যার নেতৃত্বে বাংলাদেশে ব্যাপক • হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। বৃদ্ধ, নিষ্পাপ শিশু ও অবলা নারীরাও তাদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পায়নি। এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও ব্যাপক নারীধর্ষণ বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছিল যার ফলে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষেরা এগিয়ে এসেছিলেন সর্বপ্রকার সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। প্রকৃতপক্ষে এ সংগ্রাম ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের, সত্যের বিরুদ্ধে অসত্যের।