আমার বিয়ে হলো একটি জানোয়ারের সাথে। কোনো গোল্ডেন জ্যাকল বা গ্রে উলফ নয়, নিরীহ গৃহপালিত, চতুষ্পদী জন্তু। শুনে মনে হতে পারে অজ কিংবা ধেনু। তাও নয়; ইনি কুকুর, নাম ডগি। আরো জেনেছি ডগি ফ্যাশান সচেতন। বুটি, মোজা, জ্যাকেট, সোয়েটার, পুতিওয়ালা সিল্কের পোষাক আছে ডগির। রাজা অষ্টম হ্যানরি যোদ্ধা কুকুরদের জন্য যে বাহারি কলার ব্যবহার করতেন, যোদ্ধা না হয়েও ডগি তার নরম পলকা শরীরে সৌন্দর্য বর্ধন নিমিত্তে ব্যবহার করতো সে রকমই নাম খোদাই করা সোনালি, রুপোলি, সিল্ক এবং ভেলভেটের কলার। নিউ ইউর্ক এর বিখ্যাত ফ্যাশান শো ‘লাস্ট বার্ক এট ব্রিয়ান্ট পার্ক’ দেখে আরও উদ্বুদ্ধ ডগি নিত্য নতুন আধুনিক পোশাকের জন্য কারিগরের নিকট ফরমায়েশ পাঠাতো নিয়মিতই। আলেক্সান্ডার ওয়াং কিংবা এন্থোনি রুবিও না হলেও দেশি পেট স্টাইল এক্সপার্ট আবু বকর সিদ্দীক তৈরি করে দেয় তার দৃষ্টি নন্দন পোশাক। -------------------------------------------------------------------------------------------------------- এত উত্তেজনা, শংকার ভেতরে ডগিকে দেখবার সময় কমই হয়েছিলো আমার। যতটুকু দেখেছি তাতে মনে হয়েছে ডগি ভীষণ প্রভুভক্ত, আধুনিক ভাবধারাপুষ্ট ও বিনয়ী কুকুর। বসবার ভঙ্গি, খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতি, হাঁটবার ধরণ মার্জিত ও রুচিশীল। গলায় পড়েছিলো রুপোলি নেকটাই, ঝরঝরে বাদামী সাদা পশমের সাথে রুপোলি নেকটাই এ দারুণ দেখাচ্ছিলো তাকে। বাদামী ছোপযুক্ত সাদা ধবধবে লোমশ শরীর মোমবাতির আলোয় আরো ঝলমল করছিলো। চলনে বলনে মার্জিত ও অভিজাত ডগি তাদের পিতা মাতার একমাত্র কুকুর। চেয়ারে বসেছিলো আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে। চোখে চোখ পড়তেই দেখেছিলাম প্রভুভক্ত নরম চাহনি। তাতে ঠিকরে পড়া বিনয় নিয়ে অপলক সে দেখছিলো আমাকেই। মাঝে মাঝে জিহ্বাটা বের করে একটু জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলো আবার কখনো লেজখানি তার নড়ছিলো ডোবা থেকে সদ্য তোলা তড়পানো মাছের মত। ----------------------------------------- বিয়ের দিন আরো ঘনিয়ে এল। এরই মধ্যে বিয়ে উপলক্ষ্যে ও বাড়ি থেকে বিয়ের সরঞ্জাম এল। পাঠানো হল জড়ি, চুমকি, ঝলক, সোনালি সুতা খচিত পাকা লংকা রঙ্গা শাড়ি, পাকা লংকা রঙ্গা অন্তর্বাস ও বহির্বাস, এক জোড়া পাকা লঙ্কা রঙ্গা জুতা। পাঠানো হল নামি কোম্পানি থেকে ক্রয়কৃত বহুমূল্যের সজ্জা। চোখের জন্য দুটি বদি’স স্পেশাল গুলাব খাস সুরমা; সিয়া বাটার, ম্যাংগো বাটার, কোকোনাট বাটার, সিসাম অয়েলের হাইলি ময়েসচারাইজিং অরিয়েল বিউটি বার্ক থ্রি-ডি রেড লিপস্টিক; জোজোবা অয়েল, ভিটামিন ই ও কোকোনাট অয়েলের ম্যারিলিন’স সাইনি লিপ গ্লস; ৮২ পার্সেন্ট এলার্জেন ফ্রি, ফ্র্যাগ্রান্স ফ্রি, গ্লুটেন ফ্রি, নিকেল ফ্রি, প্যারাবেন ফ্রি মার্ক নিকোল আই লাইনার; হিট মি সান এক্সপার্ট আলট্রা ম্যাট কমপ্যাক্ট ম্যাজিক্যাল ফেইস পাউডার অ্যান্ড ফাউন্ডেশান; বেভারলি মাউন্টেইন ডিলাক্স মেক আপ কিট; এইচ বি কসমেটিক; এইচ ডি ফেস এসেনশিয়াল প্যালেট এন্ড ক্রিস্টাল জোডাইক ব্রাশ সেট; পানপাতা, সিঁদুর আর কুমকুম দিয়ে তৈরি এরোমা মুন আলতা, টারজান টিউব মেহেদি; স্বেত চন্দন, রক্ত চন্দন এবং কারিশমা কোম্পানির জোড়া টিপের পাতা। সবই এল খুপরি ঘরে। গহনা যা এসেছে তা দেখে সৎ মাতার চোখ, পিতার চোখ আর পড়শির চোখ রীতিমত কপালে উঠে গেছে। বুকের পাজরের নিচ পর্যন্ত প্রলম্বিত ৩২ ইঞ্চির অপেরা নেকলেস, ৪৩০ ক্যারেটের আটসাট ভরাট ডগস কলার, ২৫০ ক্যারেটের প্রশস্ত মাথা পাট্টি সহ সিঁথি বরাবর প্রলম্বিত মাঙ টিক্কা, ৩০০ ক্যারেটের এক জোড়া কান বালা, ২৫০ ক্যারেটের রতনচুর ও বাউতি, হাজার ক্যারেটের এক জোড়া বেলোয়ারী চুড়ি ও এক জোড়া প্রশস্ত চুর। শুধু আমি আমার সৎ মাতা, পিতা এবং ঝন্টুই নয়, আশেপাশে পাঁচ গ্রামের কেউই এত গহনা কোনকালে চোখে দেখেনি। কোন শ্বশুরবাড়ির লোক তার পুত্রবধূকে পাঠিয়েছে এমন কথাও কানে শোনেনি। শুধু তাই নয়, পিতার জন্য, ঝন্টুর জন্য, সৎ মাতা আর পড়শিদের জন্য এল থান কাপড়, লুঙ্গি, গেঞ্জি ও গামছা। একটি উৎসবমুখর বিশৃংখল পরিবেশে আমার বিয়ে সম্পন্ন হল। বিয়ের দিন সকাল থেকেই আমাদের খুপরি ঘরখানি আর উঠোন গোবরজল দিয়ে লেপে পুছে পরিষ্কার করল সৎ মাতা। ঘরের ভেতরখানি ঝাড়া মোছা করলো। ঝুল, মাকড়ের জাল ছিন্ন করে দেয়াল আর ঘরের কোণা থেকে বের করে নিয়ে এল মাকড়সা, ইঁদুর আর টিকটিকি। হুড়োহুড়িতে তেলাপোকাগুলো দৌড়ে পালাবার সময় কোন কোনটা উল্টে গেল। শূণ্যে ছয় পা ছোড়াছুড়ি করে পূর্বের অবস্থানে দেহকে পাল্টে ফেলবার আগেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত গায়ের জোরে ঝাটা দিয়ে কষে মারে সৎ মাতা। জীবনভর সংসারের প্রতি তৈরি হওয়া সৎ মাতার যাবতীয় ক্রোধ তেলাপোকা তার এতটুকু শরীরে একলা বহন করবার পর চলৎশক্তি হারিয়ে সাদা চর্বি বেরিয়ে পড়ে। মুহূর্তেই এহেন হতভাগ্য তুচ্ছ ক্ষুদ্র পোকা গালমন্দের খাতিরে হতচ্ছাড়া, বদমাস, শকুন, কুকুর উপাধি প্রাপ্ত হয় আর সুনির্দিষ্ট কোন কারণ ছাড়াই অর্জন করে অনর্গল গালাগাল আর অভিসম্পাত। অতঃপর ভগ্ন পা, ছিন্ন পাখা কিছুসময় আলোড়িত করতে করতে তারা মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে টিকটিকি আর মাকড়সাও। তাদের নৈমত্তিক জীবন যাপনের সাথে আমার বিয়ে ও নতুন জীবনে যাত্রার বিন্দুমাত্র সংযোগ ও সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাস্তুতন্ত্রের সদস্য হওয়ায় জন্মের পরে আমার সবচেয়ে খুশির দিন তাদের অনাকাংখিত অন্তিমকালে পরিণত হল। আমার ঘর বাঁধবার দিনে তারা হল ঘরছাড়া। অনেক তুচ্ছ প্রাণ এরই মধ্যে বাঁচা মরার লড়াইয়ে দেহের অর্ধাংশ, ক্ষুদ্রাংশ হারিয়ে বাকি অংশটুকুতে প্রাণটি কোনরকম ধারণ করে এদিক ওদিক গা ঢাকা দিল। এহেন পারস্পারিক দ্বন্দ্ব আর ঝাড়া মোছার কাজ শেষ হলে ধোয়া বিছানার চাদর আর বালিশের আবরণ পাতা হল। এলোমেলো জিনিসপত্র গুছিয়ে সাজিয়ে রাখা হল। ঘর বাদে বাইরে উঠোন সাজাবার কাজে ব্যস্ত রইলো ঝন্টু আর পড়শিরা। সারা ঘর আর উঠোনে রঙ বেরঙের নিশান দড়িতে বেধে ঝুলিয়ে দিল সমবয়সী আর কমবয়সী পড়শির দল। স্থানে স্থানে টাঙ্গিয়ে দেয়া হল পাতার ঝুল, ফুলের ঝুল আর কাটা রঙ্গিন শাড়ি। মাটির ঘরে আলপনা আঁকা হল। একটি আল্পনায় দুষ্টু পড়শির দল আমার আর ডগির নাম জ্বলজ্বল করে সেঁটে দিল। সেদিকে তাকিয়ে লজ্জায় ক্ষণে ক্ষণে ন্যাতানো লতার মত নুয়ে পড়ছিলাম আমি। উঠোনের একপাশে কাঁঠাল গাছ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বিছানো হল চওরা চকি। তাতে লাল রঙের জড়ি বসানো চাদর পাতা। এ জড়ির চাদর সাধারণ কোন চাদর নয়। পাড়ার বহু বিবাহ এখন পর্যন্ত এই পাতানো চাঁদরে বসেই বর ও কনে সম্পন্ন করেছে। ঝন্টুর পিতার আর মাতার বিবাহের সাক্ষীও এই চাদর। আজও তা-দিয়ে বিয়ের আসন পাতা হবে আমার আর ডগির। ওদিকে রান্নার ঘরে চলছিল হরেক রকম খাবারের আয়োজন। সৎ মাতা আর বয়স্ক পড়শির দল সে সব কোমর বেঁধে রেধে চলেছে। তারই আশেপাশে ছোক ছোক করতে করতে ঘুরে বেড়াচ্ছে একদল শিশু-কিশোর ও অতিথি। বিয়ে সন্ধ্যার ঠিক পরে সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও দুপুর থেকেই বাড়িতে আর উঠোনের চারপাশে লোক সমাগম হতে শুরু করল। পাঁচ গ্রামের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যুবা, কিশোর কিশোরী, শিশুরা ও স্বজনেরা দল বেঁধে এসে খুপরি ঘরে যে যার যার মত অবস্থান নিতে শুরু করেছে। নারীরা ও পুরুষেরা তাদের সাধ্যমত নিজেদের সাজিয়ে তুলে পরিবেশকে উৎসবমুখর করে তুলেছে। জড়ি, চুমকি ও ঝলকের পাকা লংকা রঙ্গা শাড়ি, লাল জুতা, সুরমা, লিপস্টিক, পাউডার, ফেইস পাউডার, ফাউণ্ডেশন, আলতা, মেহেদি, চন্দন ও কুমকুম আর কারিশমা কোম্পানির টিপ দিয়ে তরুণী পড়শিরা আমায় সাজিয়ে তুলছে। সুনির্দিষ্ট কিছু প্রসাধনী ব্যতীত বাকি প্রসাধন সামগ্রির কোন জিনিস কোথায় মাখতে হবে সে সম্পর্কে বাস্তব কোন জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও তারা তাদের সাধ্যমত সকল প্রসাধনী ব্যবহারে সদ্ব্যবহার করে গেছে। মুখের ওপর একের পর এক ভারী প্রসাধনী ব্যবহারে মুখমন্ডল আটার দলার ন্যায় পুরু স্তরবিশিষ্ট ও ভারী হয়ে উঠেছে। সেই পুরু সাদা স্তরের উপর টকটকে লাল ঠোঁট আর কাজল কালো চোখ এঁকে দিয়েছে তারা। ধবল মুখমন্ডলের সাথে গলায় হাতে রঙের যে ব্যবধান তৈরি হয়েছে তা ঘুচানোর চেষ্টাও তারা করেছে। অতঃপর শরীরে তিলধারণের স্থান অবশিষ্ট না রেখে সকল গহনা থরে থরে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। গলায় অপেরা নেকলেস, সিঁথিতে মাথা পাট্টি ও মাং টিক্কা, কানে কান বালা, আঙ্গুলে রতনচুর, বাহুতে বাউতি, আর হাতে বেলোয়ারী চুড়ি পড়ে সজ্জিত হয়ে ডগির জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণছিলাম আমি। এ সকল সজ্জার সরঞ্জাম স্বজন ও পড়শিদের মধ্যেও ব্যাপক কৌতুহল তৈরি করেছে। গালে, ঠোঁটে ও চোখে একটিবার পরখ করে দেখবার জন্য চোখ জুড়ে তাদের আকুতির ঢেউ খেলা করে যাচ্ছিলো। বড়লোক বাড়ি থেকে কুড়িয়ে না আনলেও পড়শির হাত থেকে এ সকল দ্রব্য রক্ষার্থে সৎ মাতা তার যাবতীয় প্রাণশক্তি উজার করে দিতে লাগল। ফলে কখনো তীক্ষ্ণ তীব্র গালমন্দ, ছোট ছোট উঠতি বয়সী মানুষ বালিকাদের দু একটা চড় চাপ্পর আর অনর্গল অভিসম্পাত সৎ মাতার মুখ হতে অবিরাম বর্ষিত হতে লাগলো। সৎ মাতার তৎপরতায় কিছু সময়ের জন্য লোলুপ্ত কিশোরীর দল অন্তর্হিত হলেও কিছু সময় পর সজ্জার সরঞ্জামের প্রতি চুম্বকের ন্যায় আটকে থাকা দৃষ্টি নিয়ে আবার তারা ফিরে আসে। শুধু সজ্জার সরঞ্জামের প্রতিই নয়, এমন দৃষ্টি আমার গা জুড়ে বিরাজ করা ঝলমলে গহনার প্রতিটা অংশে অংশে অখন্ড মনোযোগের সহিত স্থাপন করে দীর্ঘনিঃশ্বাসে শোবার ঘরখানি ভারাক্রান্ত করে তোলে তারা। একই রকম প্রতিক্রিয়া অবশ্য বয়স্ক মানুষ নারীদের মধ্যে কাজ করে না। বর্ষীয়ান আত্মীয়া ও প্রতিবেশিনী যারা আসে, গায়ের গহনার শুদ্ধতা নিয়ে তারা সন্দেহ পোষণ করে কিংবা শাড়িখানার মূল্য অনুমান করে। কেউ কেউ আসল সোনা নকল সোনা চিনবার উপায় বাতলে দেয় এবং কী উপায়ে একবার নকল সোনা ঠাহর করে ফেলেছিলো গর্বভরে সে কেচ্ছা শোনায়। জুতোর রঙের সাথে শাড়িখানার রঙ মিলেছে কিনা দেখার চেষ্টা করে। কারো কারো পোষাকের রঙ, সাজের সরঞ্জাম আর গহনার নকশা নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। এ সকল অসন্তোষ, অনুমান ও সন্দেহ নিজের আপন মানুষ মনে করেই তারা করে, আমার ও আমার পরিবারের ভালো চায় বলেই এ সকল মন্তব্য না চাইতেই আপনা আপনি তাদের মুখ হতে বের হয়ে আসে ও দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঘন্টাখানিক পর উঠোনে পাতানো চকির উপর সকল আশংকার যবনিকা ঘটিয়ে আমার ঠিক পাশেই উপবেশন করল সুসজ্জিত ডগি। লেজ নেড়ে ও জিহ্বা দিয়ে ফেস ফেস শব্দ করে কিছুক্ষণ পর পর আনন্দ প্রকাশ করছিলো সে। পরনে মখমল আর কাঞ্জিভরম সিল্কের পাড় বিশিষ্ট লাল বর্ণের জড়ি বুটির জমকালো জামা, মাথায় মখমলের সোনালী বুটির লাল টুপি, লেজের শুরু থেকে লেজের শেষ পর্যন্ত স্থানে স্থানে সোনার চিকন কারুকার্য বন্ধনী, গলায় রূপোর নেক কলার আর চোখ ভর্তি সুরমায় ডগিকে দেখাচ্ছিলো রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের সিজার অব নটস এর মত। বিয়েতে ডগির পরিবার থেকে তিনটি বোন, বোনের তিনটি স্বামী ও একটি ঝি ভিন্ন আর কেউই এলনা। ডগি ছাড়া কারো চোখে মুখেই কোন উৎসাহ দেখা গেল না। আগত বরপক্ষের প্রায় সকলের মুখই ছিলো গম্ভীর। সীমাহীন বিরক্তি দুটি চোখে ফুটিয়ে তুলে আমার আর ডগির পাশেই বসেছিলো তারা। আসলে বহুদূর হতে যাত্রা করে তারা হয়ে পড়েছিলেন ক্লান্ত। তার উপর তাদেরই দিকে অখন্ড মনোযোগের সহিত দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে চারপাশে বিশৃংখল ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দারিদ্র্যক্লিষ্ট আত্নীয় ও প্রতিবেশী। এতখানি দূরদেশে এসে প্রায় হ-য-ব-র-ল সামাজিক লোক সমাবেশে অনভ্যস্ত বরপক্ষের বিরক্তিও তাই অস্বাভাবিক নয়। সেই বিরক্তি আর উৎসাহহীনতাকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত-সমস্ত-হন্তদন্ত পিতা, ঝন্টু আর বর্ষীয়ান পড়শিরা তাদের মনোরঞ্জনে তাদেরই আশেপাশে অনবরত ঘুরপাক খেতে শুরু করলো। তখন সন্ধ্যা কেবল অতিক্রম করেছে। আকাশ জুড়ে এক বিরাট ভরাট চাঁদ। খোলা উঠোনে আমাদের চারপাশে ভীড় করে রয়েছে চেনা অচেনা আত্নীয়স্বজন ও প্রতিবেশী। সকলের উপস্থিতিতে বিয়ের কর্মযজ্ঞ সমাপ্ত হলে উঠোনের এক পাশে আর খুপরি ঘরে হরেক রকম খাবারের বন্দ্যোবস্ত পরিবেশিত হল।