জীবনের দুটি দিক। একটি একান্ত ও ঘরোয়া; আরেকটি প্রকাশ্য ও বাইরের। মানুষের বাইরের জীবন সম্পর্কে তো তার কাছে ও দূরের অনেকেই জানে। কিন্তু ঘরোয়া জীবন সম্পর্কে তার ঘনিষ্ঠরাও কি সবাই জানে! এটা জানা সম্ভব নয়; আর উচিতও নয়। কিন্তু কারও কারও ঘরোয়া জীবনের কিছু কিছু ব্যবহার-বিষয় তো ক্ষেত্রবিশেষ জানতেও হয়। অনেক সময় বোঝা ও শেখার জন্যই। সেক্ষেত্রে কী করণীয়! আর এ ক্ষেত্রে মানুষটি যদি হন সর্বশেষ নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল—সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম—যাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত-কণা উম্মতের জন্য শিক্ষণীয় ও সংরক্ষণীয়; যাঁর জীবনের প্রতিটি বিন্দু অফুরন্ত বরকত ও কল্যাণে শোভিত; এবং যাঁর জীবন অনুসরণ করার জন্য রয়েছে আসমানি নির্দেশ—তখন তা জানার কী উপায়! নিশ্চয় এর সহজ ও সঠিক উত্তর হবে, রাসুলের স্ত্রীগণই এ সম্পর্কে বলতে পারবেন সবচেয়ে ভালো। নবীজি যাঁদের সঙ্গে যাপন করেছেন ঘরোয়া জীবন এবং যাঁরা ছিলেন নবীজির একান্ত জীবনের সঙ্গী। আর তাই এ কারণেই নবীজির জীবনসঙ্গিনী উম্মাহাতুল মুমিনিনের জীবনী পাঠের বোধহয় বিকল্প নেই। সৃষ্টিগতভাবেই রয়েছে মানুষে মানুষে তফাত। হাতের পাঁচ আঙুলের মাঝে আছে যেমন; মেধা বোধ-বুদ্ধি প্রকাশেও রয়েছে তেমন। রাসুলের জীবনসঙ্গিনী ১১জন। তাঁরা প্রত্যেকেই আপন আপন বিষয়ে অনন্য। নিজ নিজ সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়েই তাঁরা রাসুলকে ধারণ করেছেন। কিন্তু মানুষে মানুষে উপলব্ধি ও উপস্থাপনগত পার্থক্যের কারণেই দৃষ্টি-বিষয়-বক্তব্য ভিন্ন হয়। আর এ ভিন্নতার কারণেই নবীজির শেষ জীবনসঙ্গিনী হজরত মায়মুনা রাদিয়াল্লাহু আনহার জীবনীগ্রন্থটি আমাদের পড়া দরকার। সেইসঙ্গে জানা দরকার— তিনি কীভাবে কতটা নবীজির জীবনকে ধারণ করেছেন; এবং তাঁর জীবনের কতখানি জুড়ে আছেন নবীজি। তা ছাড়া উম্মাহাতুল মুমিনিনের মাঝে হজরত মায়মুনা রাদিয়াল্লাহু আনহার অভিনিবেশ ও অনুধাবনগত বৈশিষ্ট্যের বিষয়টি তো আছেই। দেশ ও জাতিগতভাবে মানুষের মাঝে পার্থক্য আছে। আছে তেমনি চিন্তার চর্চা এবং ভাবনার বিন্যাসগত দিক থেকেও। ইরাকির কাছে যেটি প্রয়োজনীয়, মিশরির কাছে সেটি অপ্রয়োজনীয়ও হতে পারে। ইরানির কাছে যেটি দরকারি; সুদানির কাছে সেটা দরকারি না-ও পারে। কোনো কিছু সবার চোখে সমানভাবে নিরূপণ হয় না; আর হওয়ার মানেও নেই। প্রিয় পাঠক! এসব ফারাক ও ভিন্নতার কথা ভাবনায় নিয়ে বাংলা ভাষায় উম্মাহাতুল মুমিনিন সিরিজ রচনার উদ্যোগ-আয়োজন গ্রহণ করার বড় একটি কারণ। তা ছাড়া আমাদের সময় ও সমাজ এবং দেশ ও পরিবেশের জন্য দরকারি কথাটি উপযোগী ভাষা-বিন্যাসে বলার একটি সুপ্ত বাসনা তো আছেই।