বাংলা সাহিত্যে সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুপম জীবনী নিয়ে অনেক গ্রন্থই রচিত ও অনূদিত হয়েছে। মূলত এটি শেষ হওয়ার নয়। কারণ, তাঁকে আমাদের যে পরিমাণ প্রয়োজন, এ রকম অন্য কাউকে আমাদের প্রয়োজন নেই। সুতরাং কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্তে¡র বর্ণনাধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপ্তিময় জীবনও একই সাথে উচ্চারিত হতে থাকবে। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থ—রাসূলের যুদ্ধজীবন—এ ধারারই একটি নতুন সংযোজন। প্রসিদ্ধ আরব লেখক ও গবেষক ড. আলী মুহাম্মাদ সাল্লাবী রচিত এই গ্রন্থটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় সংঘটিত সবগুলো যুদ্ধই এখানে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে জমা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইসলামী ঐতিহাসিকদের মতে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বমোট সাতাশটি যুদ্ধে (গাযওয়া) সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন। এক মলাটে এসব যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ ও শিক্ষামূলক আলোচনা পাঠককে দ্বীনী চেতনায় যেমন উজ্জীবিত করবে, তেমনই জীবনের ঘাত-সংঘাত ও বিরূপ পরিবেশে দ্বীন রক্ষায়ও সচেতন করে তুলবে, ইনশাআল্লাহ।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০