পরিবার হলো মানব সভ্যতার মূল ভিত্তি এবং সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম একক। নারী ও পুরুষ উভয়ের সমন্বয়েই পরিবার। পরিবার পরিচালনায় এবং পরিবারকে এগিয়ে নেওয়ায় নারী ও পুরুষের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অথচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পুরুষকে গৃহকর্তা বা পরিবারের কর্তা ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এই দায়িত্বটিই পুরুষদের জন্য দায়িত্বের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিবারের অন্য সব সদস্যের এমনকি পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য তথা শিশুদেরও পরিবারের অভিভাবকদের কাছে যত্ন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। যদিও একটা সময়ে আমরা মুসলিমরা নিজেদের পরিবার কাঠামো নিয়ে স্বস্তিবোধ করতাম। পশ্চিমাদের সিঙ্গেল পরিবারের তুলনায় নিজেদের যৌথ কাঠামো নিয়ে প্রশান্তি অনুভব করতাম। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম পরিবারগুলোর কাঠামোও একই রকম হয়ে যাচ্ছে। অথচ মুসলিম পরিবারের ধরনটাই এমন হওয়া উচিত ছিল যেখানে ভালো কাজগুলো উৎসাহিত হবে এবং মন্দ কাজের অনুশীলন কমে আসবে। পরিবার হলো ভালোবাসা ও সহানুভূতির কেন্দ্রবিন্দু। পরিবারের সবারই অপরের জন্য দরদ থাকবে, মায়া থাকবে, ভালোবাসা থাকবে। তবে মুসলিম পরিবারের সদস্যদের মনে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা থাকা চাই আল্লাহর জন্য, তাঁর প্রিয় রাসূল (সা)-এর জন্য। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা)-এর প্রতি ভালোবাসাই মুসলিম পরিবারগুলোর জন্য রক্ষাকবচ হয়ে কাজ করে। প্রকৃত মুসলিম পরিবারে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতেই হবে, যা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য এবং সমাজের অপরের জন্যও প্রেরণাদায়ক হবে। মুসলিম পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে মুসলিমরা তাদের আধ্যাত্মিক দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করবে। আমাদের পরিবারগুলো সাম্প্রতিক সময়ে ভেঙে যাওয়ার কারণে, কিংবা সমাজে ডিভোর্স বা তালাকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে পারিবারিক মূল্যবোধগুলো এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। সন্তান প্রতিপালন করার ক্ষেত্রেও এই বাস্তবতাটি ভয়ংকর রকমের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পশ্চিমা সভ্যতার সমালোচনা করতে গিয়ে পারিবারিক ভাঙন মুসলিম সমাজেও এখন যেভাবে প্রবেশ করেছে, তা নিয়ে সতর্ক হওয়ার এখনই সময়। সমাজের কঠিন বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জগুলো সম্বন্ধে বাবা-মায়ের সম্যক ধারণা থাকা দরকার। তাহলে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারা সঠিক কৌশল অবলম্বন করতে পারবেন। সন্তানদেরও ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে মানুষ করতে পারবেন। শিশুদের শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক বিকাশের প্রাথমিক অনুঘটক হিসেবে কাজ করবেন পরিবারের সিনিয়র সদস্যবৃন্দ। আমরা আমাদের বাচ্চাদের একটু ভালো রাখার জন্য, একটু স্বস্তিতে রাখার জন্য ভালো ভালো খাবার, মানসম্মত শিক্ষা এবং দামি দামি পোশাক কিনে দেওয়ার চেষ্টা করি। এগুলোর প্রয়োজন আছে। তবে, সন্তানদেরকে ইসলামী শিক্ষার আলোকে গড়ে তোলাটাও অনেক বেশি জরুরি। ভরণপোষণ জোগানোর চেয়ে এর গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়Ñ যদিও অনেক সময় আমরা তা বুঝতে চাই না। একটি পরিবারে সদস্যদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে চাইলে সবার আগে পরিবারের অভ্যন্তরে স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি, পরিবারের সদস্যদের মাঝে ত্যাগ করার মানসিকতা থাকলে তাতেও পরিবারের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়।
পেশায় সাংবাদিক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ সক্রিয়। ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স করে ভর্তি হয়েছিলেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে মার্স্টাস সম্পন্ন করেছেন কৃতিত্বের সাথে। মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে কলা অনুষদের পক্ষে তিনি একমাত্র গোল্ড মেডেলপ্রাপ্ত ছাত্র ছিলেন। ছাত্রজীবনেই যোগ দেন একটি জাতীয় দৈনিকে সাব-এডিটর হিসেবে। পরবর্তী সময়ে আরও বেশ কয়েকটি পত্রিকায় ও নিউজ পোর্টালে কাজ করে যোগ দেন দিগন্ত টেলিভিশনের ইংরেজি সংবাদ বিভাগে। পরবর্তী সময়ে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনুবাদ, ভয়েজ ওভার এবং চিত্রনাট্য তৈরিসহ নানা কাজ করেছেন। জাতীয় ও সাপ্তাহিক দৈনিকে তাঁর নিয়মিত কলাম প্রকাশিত হয়, যা ইতোমধ্যেই সচেতন পাঠক সমাজে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। ‘ডেসটিনি ডিজরাপ্টেড: ইসলামের চোখে পৃথিবীর ইতিহাস’ অনুবাদকের প্রথম অনূদিত গ্রন্থ।