নাট্যকার নুরুল মোমেনের (১৯০৬-১৯৮৯) নেমেসিস (১৯৪৪ : শনিবারের চিঠি) বাংলা সাহিত্যে একটি প্রখ্যাত নাটক। নাটক সম্পর্কে নাট্যকারের ব্যাপক অধ্যয়ন ছিল। নাট্যশিল্পরীতিকে তিনি যে প্রগাঢ়ভাবে আয়ত্ব ও অধিকৃত করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তার প্রমাণ এই নাটকটি বহন করে। সুরজিত নন্দী নামক একটিমাত্র চরিত্রের ব্যাপকতর সংলাপ এবং জীবনের দ্বন্দ্ব, টানাপোড়েন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি ও নৈতিকতা—কীভাবে জীবনের পরিসরকে আবৃত করে থাকে—তা এই চরিত্রটির একক প্রাণবন্ত সংলাপের সাবলীলতায় নাট্যকার এখানে উপস্থাপন করতে সমর্থ হয়েছেন। নাটকের মধ্যে ঘটনা, চরিত্র, সংলাপ, পরিবেশ নির্মাণ, ভাষাশৈলী, সমাজবাস্তবতা, জীবনদর্শন, চরিত্র ও সমাজের দ্বন্দ্ব ও টানাপোড়েন—নাট্যকার উপস্থাপন করে থাকেন। নুরুল মোমেনও নেমেসিস নাটকে নাটকের উপর্যুক্ত গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য নৈপুণ্যের সঙ্গে নাট্যমধ্যে গেঁথে দিয়েছেন। সৎ ও বিবেচক এক স্কুল শিক্ষক সুরজিত নন্দী। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি ও কালোবাজারি নৃপেণ বোসের কন্যা সুলতা সুরজিতের ছাত্রী ছিল। সুরজিতকে সুলতা ভালোবাসতো। নৃপেনের একমাত্র কন্যা সুলতা-কে সুরজিতের কাছে বিয়ে দিতে নৃপেণ সুরজিতকে অন্যায় ও অবাধ ব্ল্যাক-মার্কেটিং এ জড়িত হয়ে পড়তে বাধ্য করে। তিনমাসে লক্ষ টাকা আয় করতে পারলে সুরজিতের কাছে নৃপেণ তার মেয়ে সুলতাকে বিয়ে দেবে বলে কথা দেন । তবে তিনমাস তার কন্যা সুরজিতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেনা বলেছেন । সুরজিত নষ্ট হয়ে যেতে থাকেন আর্থনীতিকভাবে; নৃপেনের নেতৃত্বে এবং তার ম্যানেজার অসীমের প্ররোচনায়। ক্রিস্টোফার মার্লোর ডক্টর ফস্টাস ট্রাজেডিতে ফস্টাস একজন শয়তানের কাছে তার আত্মা বিক্রি করেছিলো। কিন্তু সুরজিত প্রচণ্ড হৃদয়বেদনায় ভোগছিলো যে, সে তার আত্মাকে বিক্রি করেছেন নৃপেণ বোস ও অসীমের কাছে। সুরজিত তার মাস্টার মশাই এর কাছে টেলিফোনে সবসময়ই তার এ অধপতনের কথা বলেছে পরমতম অনুতপ্ততার সাথে। স্নেহলতা নাম্নী একটি অপাপবিদ্ধা মেয়ে দুর্ভিক্ষের সময়ে অন্ন সংস্থানের জন্যে নিজের দেহকে বিক্রি করে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মূল্যবোধ সম্পন্না এই সৎ মেয়েটির চারিত্রিক এই অধপতন দুর্ভিক্ষের একটি নেতিবাচকতার ফসল। সুরজিতের মধ্যে সবসময় একটি সততা, সুন্দরতা, ন্যায়বোধ ও মানবকল্যাণ কামনা কাজ করতো; কিন্তু নৃপেণ বোসের ট্রাপে পড়ে সুরজিত যে অমানবিকতার পঙ্কে নিমজ্জিত হচ্ছিল—তার মর্মন্তুদ হাহাকার এই নাটকে ট্রাজিক পরিণতি লাভ করেছে। চোরাকারবারি ও কালোবাজারি নৃপেণ বোসের প্রধান সহকারি তার ম্যানেজার অসীমের বুকে সুরজিত ছোরা ঢুকিয়ে দিয়েছে—এর অর্থ এ হলো অনৈতিক অর্থের পাহাড় গড়ার কারিগরের বুকে সুরজিত ছুরিকাবিদ্ধ করেছে। অসীমও সুরজিতকে ছুরিকাহত করেছে। ন্যায়ের পক্ষে অন্যায়ের বিপক্ষে; দরিদ্রক্লিষ্ট জনমানুষের পক্ষে এবং বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকার কারণেই প্রচণ্ড বেদনা ও মনোকষ্ট এবং অনুতাপ নিয়ে সুরজিত এই