বিশ শতকের বিশিষ্ট সমাজচিন্তাবিদ কাজী আবদুল ওদুদ (১৮৯৪-১৯৭০) বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান বর্তমান রাজবাড়ি জেলার পাংশা উপজেলা। তিনি ১৯১৩ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাশ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ পাশ করেন। তিনি বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। ১৯২৬ সালে ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। শাশ্বত বঙ্গ (১৯৫১), সমাজ ও সাহিত্য (১৯৩৪), রবীন্দ্রকাব্য পাঠ (১৩৩৪), হিন্দু-মুসলমান বিরোধ (১৯৩৬) প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ। এছাড়া গল্পগ্রন্থ মীর পরিবার (১৯১৮), নাটক পথ ও বিপথ (১৩৪৬), উপন্যাস আজাদ (১৯৪৮), নদীবক্ষে (১৯৫১) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম রচনা করেন। তিনি যে সময়ে সাহিত্যজগতে বিচরণ করেছেন সেই সময়ে বাংলার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে বিষাক্ত ছিল। সেই সময়ে তিনি কলমের সাহায্যে হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতার কারণ এবং এ থেকে প্রতিকারের উপায় বের করার ক্ষেত্রে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর বাংলার জাগরণ নামক গ্রন্থে আমাদের রেনেসাঁর ধারাবাহিক বিবরণ দিয়েছেন। তিনি রাজা রামমোহন রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের জীবনের আদর্শকে নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছেন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলার ইতিহাসে রাজনৈতিক পালাবদলের দিন হিসেবে পরিগণিত। দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক পরিবেশে আঘাত আসে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটেই। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির ইংরেজ জাতি বাংলার মসনদে বসে। তারা এদেশে এসেছিল বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু আমাদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তারা ক্ষমতার মসনদে চেপে বসে। ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে নতুন সংস্কৃতির সাথে পুরানো সংস্কৃতির নানা অভিঘাত শুরু হয়। এতদিন ধরে বিদেশি শাসনে থাকা হিন্দু সম্প্রদায় নতুন রাজভাষা গ্রহণের জন্য এগিয়ে আসলেও শাসন ক্ষমতা হারানো মুসলমান জাতি পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞান থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলতে শুরু করে। এরই
জন্ম : ২৬ এপ্রিল ১৮৯৪, নদীয়া (বর্তমান কুষ্টিয়া) জেলার জগন্নাথপুরে মামার বাড়িতে। পৈত্রিক নিবাস তৎকালীন ফরিদপুর জেলার পাংশা থানার বাগমারা গ্রাম। পিতা কাজী সৈয়দ হােসেন ওরফে সগীরউদ্দীন। মুসলিম সাহিত্য সমাজ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’-এর অন্যতম সংগঠক ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ। শিক্ষা : ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৯ সালে এমএ পাস করেন। কর্মজীবন : ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে যােগদান। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে টেক্সট বুক বাের্ডের সেক্রেটারি রূপে কলকাতায় যান। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অবসর গ্রহণ। প্রকাশিত গ্রন্থ : নবপর্যায় (প্রথম খণ্ড-১৩৩৩), (দ্বিতীয় খণ্ড-১৩৩৬), রবীন্দ্রকাব্য পাঠ (১৩৩৪), সমাজ ও সাহিত্য (১৩৪১), হিন্দু-মুসলমানের বিরােধ (১৩৪২), আজকার কথা (১৩৪৮), কবিগুরু গ্যেটে (১ম খণ্ড-১৩৫৩), (২য় খণ্ড-১৩৫৩), নজরুল প্রতিভা (১৩৫৫), Creative Bengal (১৯৫০), শাশ্বত বঙ্গ (১৩৫৮), স্বাধীনতা দিনের উপহার (১৯৫১), কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ (১ম-১৩৬২, দ্বিতীয়-১৩৭৬), বাংলার জাগরণ (১৩৬৩), শরৎচন্দ্র ও তারপর । (১৯৬১), হযরত মােহাম্মদ ও ইসলাম (১৩৭৩)। পুরস্কার : ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে শিশিরকুমার পুরস্কার লাভ। মৃত্যু : ১৯ মে ১৯৭০ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।