মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী জন্ম ২ অক্টোবর ১৮৬৯ সালে, পূর্ব ভারতের ছোট্ট শহর পরবন্দরে। মা-বাবার চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট। হিন্দুদের মধ্যে চারটা শ্রেণি আছে-ব্রাহ্মণ বা পুরোহিত শ্রেণি, ক্ষত্রিয় বা যোদ্ধা শ্রেণি, বৈশ্য বা ব্যবসায়ী শ্রেণি এবং শূদ্র বা গৃহস্থালী শ্রেণি। গান্ধীজির পরিবার ছিল বৈশ্য শ্রেণির কারণ তারা ছিল মুদি দোকানদার। ফলে তাঁর পরিবার বৈষ্ণব ধর্ম পালন করত। তিন পুরুষ ধরে গান্ধী পরিবারের সদস্যরা দাদা থেকে শুরু, কয়েকটি কাটিয়াবাদ রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। গান্ধীজির বাবা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন নীতিবান এবং ধর্মপ্রাণ-পুরো গীতা অন্তঃস্থ ছিল তার। কথিত আছে, রাজকোটের ঠাকুরের দরবারে চাকুরি করতেন করমচাঁদ গান্ধী । দীর্ঘদিন চাকুরি করার পর ঠাকুর তাকে পুরস্কার হিসেবে যতটা ইচ্ছা জমি নিয়ে নিতে বলেন। কিন্তু করমচাদের কাছে ব্যাপারটা উৎকোচের মতো মনে হলো। ঠাকুরের অফার ফিরিয়ে দিলেন তিনি। খুবই সাধারণ জীবন-যাপন করতে পছন্দ করতেন, টাকা পয়সার ব্যাপারে আগ্রহ কখনই ছিল না। সত্য কথা বলতে ভয় পেতেন না মোটেও। মা-বাবার প্রতি গান্ধীজির গভীর সম্মান এবং কর্তব্যজ্ঞান তাঁর অন্যতম মহৎ গুণ। তাঁর বাবা যখন মৃত্যুশয্যায় তখন তিনি এবং তাঁর কাকা দিন-রাত সেবা-যত্ন করতেন। গান্ধীজির মা পুতলিবাই ছিলেন তাঁর বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। বিয়ের সময় পুতলিবাইয়ের বয়স খুবই কম ছিল। বুদ্ধিমতী আর খুব পরিষ্কার চিন্তার মানুষ ছিলেন তিনি। কোর্টলেডিদের সাথে পরিচয়ের সুবাদে রাজনৈতিকভাবেও ছিলেন খুব সচেতন। ধর্মপ্রাণ মহিলা ছিলেন, প্রতিদিন মন্দিরে যেতেন, প্রার্থনা না করে খাবার মুখে তুলতেন না কখনও। নিয়মিত উপোস করতেন। কখনও কখনও টানা সাতদিন উপোস করতেন। নিয়মানুবর্তীতায় বিশ্বাসী ছিলেন। সন্তান আর গরিবদের জন্য সমান সহানুভূতি ছিল তাঁর চরিত্রের একটা বিরাট দিক। গান্ধীজির পরবর্তী জীবনের দিকে তাকালে এটা বুঝতে কোনোরকম বেগ পেতে হয় না যে, বাবার সত্যবাদীতা আর মায়ের ধর্মপরায়ণতা তাঁর জীবন ও কর্মকাণ্ডকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।