ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১২২৭ সালের ১২ আশ্বিন, ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার মেদিনীপুর জেলার অন্তর্বর্তী বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরসিংহ গ্রাম কোলকাতা হতে ছাব্বিশ ক্রোশ দূরবর্তী। কোলকাতা হতে জলপথে বীরসিংহ গ্রামে যেতে হলে গঙ্গা, রূপনারায়ণ নদী প্রভৃতি পার হয়ে যেতে হয়। ঘাটাল হতে বীরসিংহ গ্রাম আড়াই ক্রোশ। বীরসিংহ গ্রাম বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান বটে; কিন্তু তাঁর পিতৃপিতামহ বা তৎপূর্ব-পুরুষদের জন্মস্থান নয়। তাঁদের জন্মস্থান হুগলী জেলার অন্তর্গত বনমালিপুর গ্রাম। এই গ্রাম তারকেশ্বরের পশ্চিমে জাহানাবাদ মহকুমার পূর্বে চার ক্রোশ দূরে অবস্থিত। বিদ্যাসাগরের তেজস্বিতা, স্বাধীনতাপ্রিয়তা, সত্যবাদিতা ও সরলতা চিরপ্রসিদ্ধ। তিনি এই সব গুণ পিতা ও পিতামহের কাছ থেকে পেয়েছিলেন বলে মনে হয়। পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ অসীম তেজস্বী পুরুষ ছিলেন । তিনি কারও মুখাপেক্ষা করতেন না এবং পরশ্রীকাতর ব্যক্তিবর্গের ভয়ে ভীত হতেন না। তিনি এমনই স্বাধীন-প্রকৃতির লোক ছিলেন যে তাঁর শ্যালক ও শ্বশুরবাড়ির মানুষ তাঁর বিপক্ষ ছিলেন। তাঁর মতে দেশে মানুষ ছিল না, সবই গরু। তিনি যেমন সৎসাহসী, তেমনই নিরহঙ্কার ও সত্যবাদী ছিলেন। সে সময় সনাতন সরকার গ্রামের গুরুমহাশয় ছিলেন। সরকার মহাশয় বড় কঠোর ছিলেন বলে ঠাকুরদাস পুত্রের জন্য অন্য গুরুর অন্বেষণ করেন। কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় নামক এক কুলীন ব্রাহ্মণ মনোনীত হন। ঠাকুরদাস তাঁকে আনিয়ে নিজগ্রামে একটি পাঠশালা করে দেন। বালক বিদ্যাসাগর ও গ্রামের অন্যান্য বালকেরা তাঁর পাঠশালায় পড়তেন। তিনি যত্নসহকারে সকলকে শিক্ষা দিতেন। কালীকান্তের প্রতি খুব অনুরক্ত ছিল গ্রামবাসী। বালক ঈশ্বরচন্দ্র তিন বছরে পাঠশালার পাঠ শেষ করেন। এই সময় তাঁর হাতের লেখা খুব সুন্দর হয়েছিল। তখন সর্বত্র হাতের লেখা সমাদৃত হতো।
Title
বাংলা নবজাগরণের পুরোধা পুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর