সুভাষচন্দ্র বসু পুরীর জগন্নাথ-মন্দির, কোণার্কের সূর্য-মন্দির, উদয়গিরি, খণ্ডগিরি, ভুবনেশ্বর নিয়ে সমুদ্রঘেরা উড়িষ্যা, সেখানকার কটক শহরে জন্মেছিলেন সুভাষচন্দ্র, একশো বছর আগে ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি। উড়িষ্যা তখন এখনকার মতো আলাদা কোনো প্রদেশ ছিল না। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা নিয়ে ছিল একটাই শাসনবিভাগ : বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি। বসু পরিবারের আদি বাড়ি ছিল চব্বিশ পরগণার কোদালিয়া গ্রামে। লেখাপড়ার সূত্রে তাদের যোগাযোগ ছিল কলকাতার সঙ্গে। কটকে ব্যাপটিস্ট মিশন পরিচালিত একটি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন পাঁচ বছর বয়সের সুভাষ । স্কুলটির নাম, প্রেটেস্টেন্ট ইউরোপিয়ান স্কুল। জানকীনাথ মনে করতেন, ইংরেজি না শিখলে জীবনে উন্নতি করা যাবে না। তাড়াতাড়ি যাতে ভালো করে ইংরেজি শেখা যায় তাই, বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী, সুভাষকে ভর্তি হতে হলো এই স্কুলে। ঊনবিংশ শতকের শেষভাগে কটক ছিল ছোট শহর। লোকজনেরও সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। তারপর ধীরে ধীরে এই শহর বড় হয়ে উঠেছে, ব্যবসা- বাণিজ্য গড়ে উঠেছে, তৈরি হয়েছে প্রধান দেওয়ানি আদালত। তার সঙ্গে বেড়েছে জানকীনাথের সুনাম আর প্রসার। ক্রমে তিনি সরকারি উকিল হয়েছেন। রোজগার করেছেন প্রচুর, আবার দানও করেছেন অকাতরে। বহু ছাত্রকে পড়ার খরচ যোগাতেন তিনি। জীবনের এক সংকটময় মুহূর্তে যখন, আই.সি.এস-এর চাকরি প্রত্যাখ্যান করতে সুভাষ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, অথচ বাবা এবং পরিবারের অন্য কারো সমর্থন পাচ্ছেন না, তখন এই মায়ের চিঠিই তাঁকে শক্তি, সাহস আর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। বিলেতে, সুভাষচন্দ্রকে প্রভাবতী দেবী লিখেছিলেন, ‘বাবা আর সকলেই যাই ভাবুন না কেন, গান্ধীর আদর্শই আমার পছন্দ।'