তিতাস একটি নদীর নাম - অদ্বৈত মল্লবর্মণ জীবনপঞ্জি, গ্রন্থপঞ্জি ও তিতাস প্রসঙ্গে শান্তনু কায়সার অদ্বৈত মল্লবর্মণের সমগ্র সাহিত্যিক জীবনে 'তিতাস একটি নদীর নাম' উপন্যাসটি অমর কীর্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। প্রতিকূল সংঘাতে ক্রমশ মুছে-আসা মৎস্যজীবী যে মানুষদের কাহিনী এই উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে তিনি সেই 'মালো' সম্প্রদায়েরই লোক ছিলেন। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও সুগভীর অন্তঃদৃষ্টির কারণেই উপন্যাসটিতে ধীবর সমাজের নিষ্ঠুর জীবনসংগ্রামের সাধারণ কাহিনীকে দিয়েছেন অবিনশ্বর ও অসাধারণ। উপন্যাসটির ভূমিকাংশে তিনি লিখেছেন, “তিতাস একটি নদীর নাম। তার কূলজোড়া জল, বুকভরা ঢেউ, প্রাণভরা উচ্ছ্বাস। স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়। ভোরর হাওয়ায় তার তন্দ্রা ভাঙ্গে, দিনের সূর্য তাকে তাতায়; রাতে চাঁদ ও তাঁরারা তাকে নিয়া ঘুম পাড়াইতে বসে, কিন্তু পারে না।” তিতাস নদী ও তার দু'কূলের মানুষের জীবনযাত্রাকে ঘিরে রচিত তিতাস একটি নদীর নাম উপন্যাসে কিশোর, সুবল, অনন্ত, বনমালী প্রমুখ চরিত্রগুলো স্থান পেয়েছে। উপন্যাসটির সামগ্রীক মূল্যায়ন ও বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন অদ্বৈত মল্লবর্মণের জীবনীকার অধ্যাপক শান্তনু কায়সার। তাঁর মতে, “তিতাস জীবনের শেকড় প্রাকৃত জীবনের গভীরে প্রোথিত। এই প্রাকৃত জীবনকে বাইরে থেকে যতই সরল দেখাক এর ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে, তা বহু ভঙ্গিমা ও বৈচিত্র্যের অধিকারী।” তাঁর এ বিখ্যাত উপন্যাসটি প্রথমে মাসিক পত্রিকা মোহাম্মদীতে প্রকাশিত হয়েছিল। কয়েকটি অধ্যায় মোহাম্মদীতে মুদ্রিত হবার পর উপন্যাসটির মূল পাণ্ডুলিপি রাস্তায় খোঁয়া যায়। বন্ধু-বান্ধব ও অতি আগ্রহী পাঠকদের আন্তরিক অনুরোধে তিনি পুণরায় কাহিনীটি লেখেন। কাঁচড়াপাড়া যক্ষ্মা হাসপাতালে যাবার আগে এই গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি বন্ধু-বান্ধবকে দিয়ে যান। অদ্বৈত মল্লবর্মণের মৃত্যুর কয়েক বছর পর 'তিতাস একটি নদীর নাম' শিরোনামের এই উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এই একটি মাত্র উপন্যাস লিখেই তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম স্মরণীয় প্রতিভা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
জন্ম ১৯১৪ সালের ১ জানুয়ারি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গােকর্ণ গ্রামে এক মৎস্যজীবী পরিবারে। শৈশবেই মাতৃপিতৃহীন। ১৯৩৩ সালে স্থানীয় অন্নদা। এইচ. ই. স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর অর্থোপার্জনের জন্য কলকাতায়। গমন। পেশাগত জীবনের শুরু ত্রিপুরা পত্রিকায়। এরপর সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন নবশক্তি, মাসিক মােহাম্মদী, নবযুগ, আজাদ, কৃষক পত্রিকা ও সাময়িকীতে।। উপন্যাস তিতাস একটি নদীর নামতার স্মরণীয় সাহিত্যকীর্তি। আরভিং স্টোনের উপন্যাস লাস্ট ফর লাইফ-এর বাংলা । অনুবাদ তার আরও একটি উল্লেখযােগ্য সাহিত্য প্রয়াস। মৃত্যু ১৬ এপ্রিল, ১৯৫১।