আল-কুরআন জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল ও প্রধান উৎস। এটি আরবী ভাষায় অবতীর্ণ । এতে আরবী অলংকার বিজ্ঞানের সৌকর্য রীতি ও পদ্ধতি প্রযুক্ত হয়েছে। এ মহাগ্রন্থে অনেক স্বল্প প্রচলিত ও রূপকার্থবোধক শব্দ ও বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে, যা সাধারণভাবে বোধগম্য নয়; বরং এগুলো অনুধাবনের জন্য ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের অতীব প্রয়োজন। এ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে তাফসীর বলা হয়। আরবী জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় তাফসীর শব্দটি আল-কুরআনের বাণী হৃদয়ঙ্গম করার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে তাফসীর বর্ণনার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয় । সাহাবীগণ কোন আয়াতের শাব্দিক বিশ্লেষণ এবং ভাব উদঘাটনে সক্ষম না হলে তাঁরা রাসূল সা.-এর শরণাপন্ন হতেন। তিনি তাঁদেরকে আল-কুরআন সম্পর্কিত তাঁদের উপস্থাপিত বিষয়গুলো সুষ্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতেন। ফলে তাঁরা সহজেই সংশ্লিষ্ট আয়াতের মর্ম অনুধাবনে সক্ষম হতেন। এভাবে নবীযুগে তাফসীর অভিজ্ঞানের গোড়াপত্তন হয়। রাসূল সা.-এর ইন্তিকালের পর সাহাবী, তাবিঈ ও তাবি-তাবিঈনের যুগে এ অভিজ্ঞান বিকশিত হয় সম্প্রসারিত হয় এর দিগন্ত। পরবর্তীকালে এটি পূর্ণ শাস্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সূচনাকাল থেকে অদ্যাবধি আল-কুরআনকে ঘিরে অসংখ্য বিদগ্ধ পণ্ডিত তাফসীর গ্রন্থ রচনা করেছেন। এ সমস্ত মনীষী ও তাঁদের রচিত তাফসীরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ভাষায় অনেকেই অসংখ্য গ্রন্থ প্রণয়ন করে এ অভিজ্ঞানকে করেছেন সমৃদ্ধ । এরই ধারাবাহিকতায় উল্লেখ্যযোগ্য মুফাসসিরদের জীবনী ও তাঁদের রচিত তাফসীর পর্যালোচনা বিষয়ে বাংলা ভাষায় এ বক্ষমান গ্রন্থটি অনন্য ও অসাধারণ ।
ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বগুড়া জেলার কাহালু থানাধীন কচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পর তিনি মাদরাসায় ভর্তি হন। তিনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল থেকে কামিল পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগসহ মেধাতালিকায় অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ১৯৯০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে বি.এ. অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৯১ সালের এম.এ. পরীক্ষায়ও রেকর্ড পরিমাণ নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। কলা অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তির স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি দু'টি স্বর্ণপদক ও দু'টি বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বৃত্তি লাভ করেন। ড. বেলাল ১৯৯৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বর্তমানে এ বিভাগে প্রফেসর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে কিছুদিন ভিজিটিং প্রফেসরের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ বছর শিক্ষকতার জীবনে পাঠদান ও গবেষণার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সেমিনারেও যোগদান করেন। তিনি মিসর, সৌদি আরব, লেবানন ও ভারতসহ অনেক দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে তাঁর প্রায় অর্ধ শতাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর প্রকাশিত ও প্রকাশনাধীন গবেষণামূলক গ্রন্থের সংখ্যা ৩১টি। তন্মধ্যে আরবি ভাষায় লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭টি। ইতোমধ্যে আরবি ভাষায় মিসরের কায়রো ও লেবাননের বৈরুত থেকে তাঁর ৩টি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি তাফসীর বিষয়ে অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি মিসরের বিশ্ববিখ্যাত আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে উসূলুদ দীন ফ্যাকাল্টিতে তুলনামূলক ধর্ম বিষয়ে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। তাঁর গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘ইলমু মুকারানাতিল আদইয়ান: নাশআতুহু ওয়া তাতাওয়ারুহু ওয়া মুসাহামাতু ‘উলামায়িল মুসলিমীন ফীহি। তিনি অধ্যাপনার পাশাপাশি উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক মাস্টার্স থিসিস, এমফিল ও পিএইচডি গবেষণাকর্মের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং করছেন।