তাকওয়া কাকে বলে আমি জানি না । আর ইসলামের অন্যান্য মূল্যবোধ সম্পর্কেও আমার খুব একটি তাত্ত্বিক জ্ঞান নাই । তবে এতটুকু জানি, এগুলো হলো মানুষের হৃদয়ের গভীরে এক ধরনের অনুভূতি । বরং ইসলামি মূল্যবোধ বলতে আমি বুঝি মানুষের ব্যক্তিজীবন হতে কর্মজীবন তথা ব্যবহারিক জীবনে প্রত্যাবর্তন। আর এ ক্ষেত্রে আমি ঈমানী মূল্যবোধের গুরুত্ব এবং মানব জীবনে এর প্রভাব উপলব্ধি করি I আমাদের মধ্যে কেউ যদি অর্ধ শতাব্দী অবধি একাডেমিক ও তাত্ত্বিকভাবে আল-কুরআন অধ্যয়নে নিমগ্ন থাকে, আত্মিক অনুভূতি ও জীবনে তার প্রতিফলন না থাকে, সত্যিকার আনুগত্য ও মহান আল্লাহর প্রতি ভীতি নম্রতা অনুপস্থিত থাকে তা হলে সে আল-কুরআন দ্বারা খুব সামান্যই উপকৃত হবে। অতএব, কুরআনের সত্যিকার গুরুত্ব তা জীবনে বাস্তবায়ন করার মধ্যেই নিহিত। মুমিন কোনো কিছু আঞ্জাম দিতে, মানুষের সামনে চর্চা করতে কিংবা যারা তাকে সম্মান করে তাদের সামনে যেসব কাজ করতে লজ্জাবোধ করে তার সব কিছুর জন্য নিজেই নিজের রক্ষক। অতএব তার উচিত যখন সে একাকী থাকে কিংবা মানুষের পাহারাদারির মধ্যে থাকে এমন কাজ না করে যাতে তাকে লজ্জিত হতে হয়। এই ধরনের কাজ আদৌ আঞ্জাম দেয়া হতে বিরত থাকা, অতি সংগোপনে কিংবা পর্দার অন্তরাল থেকে তা সাধন না করা তার জন্য উত্তম। কেননা মহান আল্লাহ সদা সর্বদা এবং সার্বক্ষণিক আমাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি অতি সহজেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আছেন । যতদূর সম্ভব, কল্যাণের পথে দ্রুত অগ্রসর হও। আর যথাসাধ্য কল্যাণের পথে শ্রম-সাধনা ব্যয় কর। আর নিজের সকল শক্তি-সামর্থ্য ব্যয় কর যাতে মহান আল্লাহর পথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে কেউ তোমাকে অতিক্রম করতে না পারে। আর তুমি তোমার পথ চলতে গিয়ে সদা তাকওয়া এবং ইয়াকীন তথা দৃঢ় বিশ্বাসের নিরাপত্তার দুটো ডানাকে শক্তভাবে ধারণ কর । সতর্কতা ও সচেতনতার মাধ্যমে তুমি তোমার ঈমানকে রক্ষণাবেক্ষণ কর । তোমার বক্ষের অভ্যন্তরে তা অনুসন্ধান কর। ধারাবাহিকভাবে তোমার ঈমানের পরিমাপ সম্পর্কে অবহিত হও। আর তা কি বাড়ছে না কমছে তা জানতে চেষ্টা কর, যাতে ঈমান বৃদ্ধিপায়, হ্রাস না পায়। এভাবে করলে পরে ঈমান বৃদ্ধি পাবে, অন্তকরণে এর স্ফূরণ ঘটবে এবং সৎকর্মের মধ্যে এর পরিপুষ্টি সাধিত হবে। ঈমানের সকল দুর্বলতায় আত্মসমালোচনা কর এবং আত্মমর্যাদা সংরক্ষণ ও উন্নত নৈতিক চরিত্র সংরক্ষণে যত্নবান হও ।
ড. আহমদ তুতুঞ্জি একজন চিন্তাবিদ এবং বিশ্বব্যাপী জনকল্যাণধর্মী কাজের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিত্ব। ১৯৪১ সালে উত্তর ইরাকের আরবীল শহরে তাঁর জন্ম । বাগদাদে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। অতঃপর ইরাকের তেল মন্ত্রনালয় হতে মেধাবৃত্তি লাভ করে পড়াশোনার জন্য ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৯৬৩ সালে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে অয়েল এণ্ড মিনারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। অতঃপর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি আমেরিকা গমন করেন। এখানে এসে তিনি পেনসালভেনিয়া রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় হতে তেল উত্তোলন প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়ন করে ১৯৬৪ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি পিএইডি. ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. তুতুঞ্জি অনেকগুলো একাডেমিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক জনকল্যাণমূলক সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণ করেন। বিশেষত: উত্তর আমেরিকা, কানাডা এবং আরব বিশ্বে। এর উল্লেখযোগ্য হলো- যুক্তরাজ্য ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে মুসলিম ছাত্র সংস্থা Muslim Students Socity (MSS), ইউরোপে সম্মিলিত মুসলিম ছাত্র সংঘ Union of Muslim Students Organization (UMSO), ইসলামি ছাত্র সমাজ ফেডারেশন Federation of Student Islamic Societies (FOSIS) যুক্তরাজ্য ও উত্তর আয়ারল্যান্ড, মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা Muslim Student Association (MSA)। এছাড়াও তিনি অনেকগুলো জনকল্যাণধর্মী সংস্থা ও ওয়াকফ সংস্থা প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণ করেন। যথা- উত্তর আমেরিকায় ইসলামি ওয়াকফ ভার্জিনিয়া রাজ্যের স্যার জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন, কুয়েত আন্তর্জাতিক ইসলামিক জনকল্যাণ সংস্থা ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি সউদী আরবের রিয়াদস্থ ওয়ার্ল্ড এসেম্বলী অব মুসলিম ইয়থ World Assembly of Muslim Youth (WAMY) প্রতিষ্ঠায়ও অংশগ্রহণ করেন । বেশ কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক ও একাডেমিক সংস্থা প্রতিষ্ঠায় তিনি অনবদ্য অবদান রাখেন। উদাহরণ হিসেবে International Institute of Islamic Thought (IIIT)- এর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে, যা কয়েকজন স্কলারের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন। আর তিনি লিবিয়ায় আল ফাতেহ বিশ্ববিদ্যালয়ে অয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমানে কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়) অয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিভাগে তিনি দীর্ঘ দশ বছর বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।