নীরজার স্বামী আদিত্যের ছিল ফুলের ব্যবসা। আর সেই থেকে ফুলের প্রতি অনুরাগ জন্মায় নীরজার। দশ বছর সুখে দাম্পত্যজীবন অতিবাহিত করার পর নীরজা সন্তানসম্ভবা হয়। কিন্তু প্রসবকালে নীরজার সন্তানের মৃত্যু হয়। এরপর নীরজা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাগানের কাজে নীরজা আর আদিত্যকে সাহায্য করতে পারে না। তাই আদিত্যের দূরসম্পর্কের বোন সরলা আসে বাগানের কাজে তাকে সাহায্য করতে। এদিকে বাগান পরিচর্যা ও ব্যবসার কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ে আদিত্য। সরলা ও আদিত্য পরস্পর পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। নীরজার প্রতি আদিত্যের অবহেলা স্পষ্ট হয়ে পড়ে। আদিত্য নিজে না এসে তার খুড়তুতো ভাই রমেনকে পাঠাতে থাকে নীরজার সেবাযত্নের জন্য। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নীরজা সরলার সঙ্গে রমেনের বিয়ে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে। তারপর একদিন আদিত্যের অবহেলা সইতে না পেরে নীরজা সরাসরি আদিত্যের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ আনে। এতে বাড়ি থেকে বিদায় নেয় আদিত্য। এদিকে আদিত্যের প্রতি তার আকর্ষণের কথা বুঝতে পেরে বিবেকের দংশনে আদিত্যের কাছ থেকে সরে যাওয়ার কথা ভাবে সরলা। পরে আদিত্য নিঃসহায় সরলার প্রতি তার কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে নীরজাকে চিঠি লেখে। সেই চিঠির ছত্রে ছত্রে ধরা পড়েছিল সরলার প্রতি আদিত্যের অনুরাগ। তীব্র মানসিক আঘাতে দীর্ণ নীরজা আশ্রয় নেয় ঠাকুরঘরে। তারপর একদিন আদিত্যের ফিরে আসার খবর পেয়ে নীরজাও ঠাকুরঘর থেকে বেরিয়ে রমেনের মাধ্যমে সরলাকে ডেকে পাঠায়। সরলাকে নিজের গয়না পরিয়ে দেয়। কিন্তু বিবেকের দংশনে সরলা একটি চুরির অভিযোগ মাথায় নিয়ে কারাবরণ করে। আদিত্য আবার ফিরে আসে নীরজার জীবনে। কিছুদিন পরে খালাস পেয়ে ফিরে আসে সরলাও। সরলাকে দেখে রাগে ফেটে পড়ে নীরজা। সহ্য করতে না পেরে তক্ষুনি মৃত্যু হয় তার।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি, সমাজ-সংস্কারক এবং দার্শনিক। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে কলকাতার ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিমনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই মানেই এক মোহের মাঝে আটকে যাওয়া, যে মোহ পাঠককে জীবনের নানা রঙের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয় নানা ঢঙে, নানা ছন্দে, নানা সুর ও বর্ণে। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তিনি একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা দুই-ই ছিলেন। কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া তিনি চিত্রাংকনও করতেন। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। আজও আমাদের বাঙালি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে বিশ্বকবির সাহিত্যকর্ম।