বেশ কয়েক বছর ধরে 'রাজনীতিতে নারী' শীর্ষক বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে বিএসএস সম্মান শ্রেণির সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং ছাত্রছাত্রীরা এ বিষয়টি অধিক আগ্রহ ও মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করে আসছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বাংলাভাষায় এমনকি ইংরেজি ভাষায়ও এ বিষয়ে তেমন কোনো গ্রন্থ বা জার্নাল না থাকার কারণে অনেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোর্সটি গ্রহণ ও অধ্যয়ন করতে ছাত্রছাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না। উপরন্তু, এ বিষয়ে যা কিছু তথ্য এখানে-সেখানে ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে সেগুলো একত্রে সমন্বিত করা তাদের অনেকের কাছেই অত্যন্ত জটিল ও দুরূহ কাজ বলে মনে হয়। এসব প্রতিকূলতার কথা চিন্তা করে এবং প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রীদের কথা স্মরণ রেখেই আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস “রাজনীতি ও উন্নয়নে নারী”। বইটিকে সর্বমোট দশটি অধ্যায়ে বিন্যাস করেছি। প্রতিটি অধ্যায়কে যতদূর সম্ভব তথ্যবহুল, প্রাসঙ্গিক এবং সংক্ষিপ্ত অথচ বিশ্লেষণমূলক করতে চেষ্টা করেছি। যদিও তৃতীয় বিশ্ব এবং বিশেষকরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নারীর অবস্থান, মর্যাদা ও ভূমিকার উপর সবিশেষ আলোকপাত করার প্রয়াস পেয়েছি তবুও আন্তর্জাতিক তুলনামূলক প্রেক্ষাপটে নারীর পদমর্যাদা ও ভূমিকার উপরও একটি অধ্যায় এতে সংযোজন করেছি। তদুপরি নারী ও মানবাধিকার, নারীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস যা সর্বব্যাপী বিদ্যমান, জাতিসংঘ নারী দশক এবং নারী উন্নয়নে জাতিসংঘের বিভিন্নমুখী উদ্যোগ এমনি আরো অনেক বিষয়ের উপর আলোচনা করেছি কয়েকটি অধ্যায় জুড়ে। নারীবাদ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রেক্ষাপটও আলোচনা থেকে বাদ দেইনি। উন্নয়নশীল বিশ্বে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় জাতীয়তাবাদী সংগ্রামে নারীদের অবস্থান ও ভূমিকার উপর আলোকপাতসহ মুসলিম বিশ্বে নারীর ভূমিকা ও অধিকারের স্বরূপ তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আইনগত ব্যবস্থা কীভাবে স্ব স্ব দেশে নারীদের জীবনে প্রভাব ফেলছে সে দিকটির প্রতিও দৃষ্টিনিক্ষেপ করেছি। সর্বশেষ অধ্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তন সাধনের উপায় সম্পর্কেও আলোচনা বিধৃত করেছি বইটিতে। সবমিলিয়ে বইটিকে সিলেবাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে যতদূর সম্ভব পূর্ণাঙ্গ অবয়ব দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কতদূর সফলকাম হয়েছি তা বিচারের ভার ছাত্রছাত্রী এবং সম্মানিত শিক্ষকদের উপরই রইল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বইটিকে পাঠ্য হিসাবে গ্রহণ করলে ছাত্রছাত্রীরা সবিশেষ উপকৃত হবে। এমনকি সাধারণ পাঠকবৃন্দও একে সুখপাঠ্য বলে মনে করবেন বলে আমার ধারণা।