প্রসিদ্ধ আছে : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে এবং সুলতান আবদুল হামিদ ওসমানির শাসনামলে একদল প্রভাবশালী ইহুদি বিশ্বের ইহুদিদের বসতি স্থাপনের জন্য তাদের কাছে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডটি বিক্রি করে দেয়ার জন্য তাকে প্রস্তাব দেয়। তিনি তাদেরকে যে জবাব দিয়েছিলেন তা হচ্ছে একজন কর্তৃত্বশালী ওসমানি সুলতানের মধ্যে অবশিষ্ট থাকা ইসলামি আত্মমর্যাদাবোধের নির্দেশক। তিনি বলেন: “আমরা এখনো পর্যন্ত একজন জীবিত মানুষের (মরণাপন্ন হলেও) শবব্যবচ্ছেদ করতে শুনিনি।' ভিয়েনা বিজয়ে ওসমানিদের ব্যর্থতার পর থেকে এই সাম্রাজ্যের ক্রমশ পতন শুরু হয়। রুশদের বিরুদ্ধে পরাজয় এবং ক্রিমিয়া হারানো ছিল এই মুসলিম শাসনের ক্রম-পতনের আর একটি লক্ষণ। ইউরোপীয়রা ওসমানিদের বিরুদ্ধে সামরিক ও রাজনৈতিক অবরোধের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে একটি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধও শুরু করে এবং ওসমানি সরকারকে ইউরোপের রুগ্ন মানুষ উপাধি দেয় । ইউরোপীয় সশস্ত্র শাস্তির প্রায় ত্রিশ বছরের একটি যুগে যখন ইউরোপের সব শক্তিশালী সরকার, নিজেদেরকে একটি বিশাল এবং পূর্বাভাসযোগ্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করছিল, তখন ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং রাশিয়ার একটি জোট, যারা নিজেদেরকে জার্মান এবং অস্ট্রিয়ার মুখোমুখি দেখতে পাচ্ছিল, জার্মান মিত্র হিসাবে ওসমানিকে দখল এবং বিচ্ছিন্নতার ক্ষেত্রও প্রস্তুত করছিল। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতগণ ইরান এবং উসমানিদের মধ্যে কনস্ট্যান্টিনোপল চুক্তি নামে খ্যাত ট্রিটি- ১৯১৩ সম্পাদনের জন্য অনেক প্রচেষ্টা চালায়। এই চুক্তি সম্পাদনের আবশ্যকতার প্রাথমিক কারণ ছিল ইরানের সংবিধান আন্দোলন এবং অভিযোগ-অনুযোগ উত্তরকালের অব্যবহিত পরের বছরগুলোতে ইরানের ভূমিতে ওসমানি বাহিনীগুলোর একাধিকবার আক্রমণ ও আগ্রাসন। এই চুক্তি সম্পাদনে কুখ্যাত সাম্রাজ্যবাদী সরকার যে জোরালো প্রয়াস চালায় তা এমন এক বিস্ময়ের কারণ ছিল, যা বিশেষভাবে পরের বছর, ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে, অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার কিছুকাল পূর্বে, সংযুক্ত প্রটোকলে ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের কনস্ট্যান্টিনিয়া সীমান্ত চুক্তির ত্রুটি ও সমস্যাবলি তথাকথিত সংশোধন করেন। যুদ্ধ শুরুর পর ওসমানিদের পরাজয় এবং ফ্রান্স ও ব্রিটেনের তদপরবর্তী পদক্ষেপসমূহে পর এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল ইরানের সাথে ওসমানিদের পূর্ব সীমান্ত সুদৃঢ় করা, ওই সরকারের পতন-উত্তর দখলি যুগের রূপরেখা প্রণয়ন এবং মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের দখল করা ভূমি বণ্টনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে (প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে) ব্রিটেন এবং ফ্রান্স সরকারের প্রতিনিধিদ্বয় সায়েস এবং পিকুর মধ্যে গোপনে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয় এবং কার্যত লুণ্ঠনের বণ্টন রেখাগুলো চূড়ান্ত হয়। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তদানীন্তন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রভাবে, ব্রিটেন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এবং এতে ঘোষণা করে যে, বৃটিশ সরকার ইহুদিদের আবাসনের সুবন্দোবস্তের লক্ষ্যে ফিলিস্তিনে তাদের জন্য বসতি স্থাপনে নিজেকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মনে করে। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে ওসমানি ও জার্মানিদের পরাজয়ের মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ব্রিটিশ জেনারেল 'লর্ড এ্যালেন বি' যখন বাইতুল মোকাদ্দাসে প্রবেশ করেন, তখন তিনি এমন এক ঐতিহাসিক উক্তি করেন যা পশ্চিমা হানাদারদের স্বরূপ নির্দেশ করছিল। বর্ণিত রয়েছে যে তিনি বলেন: 'আজ ক্রুসেডের সমাপ্তি হয়েছে।' অর্থাৎ বাইতুল মোকাদ্দাসে ক্রুসেডীয়দের লাঞ্ছনাকর পরাজয়ের শয়তানী উত্তরাধিকার আকারে একটা প্রতিহিংসা তাদের মনের ভেতর ছিল এবং এটি দখলের মাধ্যমে, তাদের মনের আক্রোশ মেটায়।