মুসলিম সমাজে ধর্মীয় পরিসরে আধুনিকতাবাদী বলতে এমন লোককে বোঝায়, যিনি শেষ নবি মুহাম্মাদ সাঃ-এর আনীত এবং স্বীকৃত ইসলামের প্রতি বিরাগভাজন এবং ইসলাম ও পশ্চিমা সভ্যতায় সামঞ্জস্য প্রমাণে চেষ্টমান। নামে মুসলিম হলেও আধুনিকতাবাদীরা পশ্চিমের নানা মতবাদ ও ধ্যান-ধারণার নিরিখে ইসলামকে বিচার করেন। ইসলামের যা কিছু ইউরো-মার্কিন আদর্শ ও মূল্যবোধের সঙ্গে অসমঞ্জস, সেই সবকিছুকে তাঁরা অপাঙ্ক্তেয় করতে তাঁদের মেধা ও মনন ব্যয় করেন। এ জন্য তাঁরা ইসলামের শুরু থেকে চলে আসা কুরআন-হাদিসের প্রতিষ্ঠিত মত ও সিদ্ধান্তের অপব্যাখ্যা করতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। এই আধুনিকতাবাদী প্রবণতা প্রথমে মুতাজিলাদের হাত ধরে হিজরি প্রথম শতকে শুরু হয়। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে উনিশ ও বিশ শতকে এ আন্দোলন নতুনভাবে জেগে ওঠে, অতীতের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে। এই সময়ে যাঁদের মাধ্যমে এই আন্দোলনটি গতি পায়, তাঁদেরকে বলা হয় আধুনিকতাবাদী বা মডারেট মুসলিম। এঁরা হয়ে থাকেন মেধায় অনন্য, জ্ঞানে-গুণে অসাধারণ। ‘বেশি জ্ঞান’-এর ফলে তাঁরা একসময় হয়ে ওঠেন মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক। তাঁদের মন-মগজ অভিভূত করে রাখে ইউরোপীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ। এরই আলোকে তাঁরা ইসলামের অদ্ভুত সব ব্যাখ্যা করতে থাকেন। দীনকে হাসি-তামাশার বস্তুতে পরিণত করেন। ফলে ইসলামের এমন এক সংস্করণের উদ্ভব ঘটে, যেখানে প্রকৃত ইসলামকে খুঁজে পাওয়া শুধু কঠিনই নয়, রীতিমতো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে লেখক ড. মুহাম্মাদ জুবায়ের এমন কজন আধুনিকতাবাদী মুসলিমের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও তাঁদের চিন্তার ভ্রান্তি তুলে ধরেছেন। পাঠকদের জন্য গ্রন্থটি এ বিষয়ে পথিকৃৎ হতে পারে।