ইতিহাস নির্মাণের ইতিহাস রচনা একটি রাজনীতিক প্রয়াস নিঃসন্দেহে। সেখানে, প্রাত্রমিত্র, কর্তা-কর্তব্য নিজস্ব বয়ান ও যৌক্তিকতা উৎসারিত বৈধতা প্রতিষ্ঠা করে ‘ইতিহাস' নির্দিষ্ট করে নেয়। ইতিহাসের মূর্ত আবির্ভাবের ভেতর যার যার অবস্থান, লড়াই ও অধিষ্ঠান স্বীকৃত হয়। এযাবত চর্চিত লিখনপ্রণালি তাই। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু, ব্যতিক্রমহীনতার মধ্যে যে কণ্ঠস্বর চাপা পড়ে গেছে, যে দ্রোহ ও জাগরণের অভিজ্ঞতা নামহীন, আপাতত নিস্তব্ধ, তার নিশানা উড়িয়ে নেসার আহমেদ আমাদের জীবন্ত জিজ্ঞাসার সম্মুখীন করেন। সেই জিজ্ঞাসা স্পষ্টতই বহাল বৈধতা এবং ক্ষমতার যুগপৎ ন্যায্যতা তৈরির প্রয়াসজাত একচ্ছত্র বীরত্ব ও সত্যের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রচেষ্টার স্বরূপ তুলে ধরে। সেই ভিত্তিভূমির সংস্থাপনে অনুল্লেখ্য উপাদান অন্তর্ভুক্ত করণ কিংবা প্রান্তসীমার প্রসার ঘটিয়ে। প্রচলিত ‘অবদান’ আবিষ্কার এখানে মােটেই। লেখকের উদ্দেশ্য নয়। বরং তিনি তুলে আনতে সচেষ্ট, স্বপ্ন- অসমাপ্ত আখ্যান- নারীর নিরিখে। একটি জনগােষ্ঠীর উন্মেষ যাত্রায় তুঙ্গ বাকপর্বে অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্বের চরিত্রে নারীর সংকল্প, অভিপ্রায় ও অন্তর্গত তাগিদ। সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, বিপ্লব ও বিদ্রোহের আন্তসম্পর্কে নারীর জায়গাটি কোথায় বরাদ্দ এবং কীভাবে নির্মিত থাকে সেই নানামাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। এসব চৌহদ্দির ভেতর, উপস্থিত শর্ত ও পরিস্থিতির মধ্যে সম্পর্ক রচনায়, সম্পর্কের রূপান্তর প্রয়াসে, যেভাবে ইতিহাসের অভিমুখ বদলে দিতে নারীর আপন কর্তাসত্তার অভিষেক ঘটেছিল তাকে অবিকল নিজস্ব ভাষায় সংগঠিত করেছে জীবন জয়ের যুদ্ধ। বিবিধ অভিজ্ঞতার বিপুলাকৃতির সংগ্রাম, জীবনের অভিন্ন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কীভাবে একাত্ম হয়, ঐকান্তিক ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আজ ও আগামীর আলাে হয়ে উঠতে পারে তার প্রামাণ্য নজির নকশাল আন্দোলনের এইসব নারীদের আলেখ্য।