প্রথম ইনকোর্সের ডেট পরেছে। পরীক্ষার বেশি দিন বাকি নেই। এর মধ্যেই শহরে বন্দরে, গ্রামে গঞ্জে, দেশে বিদেশে, সমুদ্র পাড়ি দিয়ে মহাদেশে মহাদেশে হুংকারের এক মহাগুঞ্জন ধ্বনি গুঞ্জরিছে। চতুর্দিকে ঘুরে ফিরে শুধু ধ্বংশ লীলার ক্রন্দন ধ্বনি। সমীরণের তীব্র গতিতে মানব দেহ পচনের গন্ধে অন্ধ গোটা পরিবেশ। স¦জন হারানোর বিয়োগ ব্যথায় হৃদয় গহীনে আন্দোলিত হচ্ছে। রিমোট চাঁপতেই ভেসে আসে- এ যে করুণ করোনার ছোবলে দংশিত পৃথ্বী। স্বর্গদ্বীপ শ্মশানে পরিণত হচ্ছে, বিলীন হচ্ছে বংশ পরিচয়। জননীর দেহ দিয়ে দেহ তৈরি করা পুত্রের শরীর স্পর্শ করতে পারছে না জননী। বাপ কন্যার রোগাক্রান্তের যত্ন নিতে পারছে না। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জালড়া বাবাকে সেবা করতে পারছে না মেয়ে।br পিপাসা যন্ত্রণা সজ্জ করতে না পেরে মৃত্তিকার উপর ছটফট ছটফট করতে করতে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে যাচ্ছে দুগ্ধ পানরত শিশু। মৃত্যুলাভ করা সন্তানের পাশেই শ্বাসরুদ্ধ মাতা প্রাণ কূন্য হয়ে লুটিয়ে পরছে। এ যেন মৃত্যুর মিছিল! মশাল জ্বালিয়ে, দিবালয়ে কেতন উড়িয়ে ধাওয়া করছে। ঘরশূন্য, বাড়িশূন্য সবাই অদৃশ্য ভাইরাসের ভয়ে যাযাবর হয়ে দেশ দেশান্তরে প্রাণ বাঁচাবার আশায় মাথা গুঁজছে। brপ্রাণের ভাই নেই, মা মরেছে সকালে, বাবা যায়যায় অবস্থা, জঠরের সন্তান জঠরে নিয়েই বোন মনুষ্য সমাজের আড়ালে লুকিয়ে গেছে। রোগ নিরাময় গৃহের সম্মুখে নিজেও অশ্রুসিক্ত নয়নে ঢলে পরছে। এ যেন পলাশী সিপাহী নয়, এ যেন মুক্তিযুদ্ধ নয়, এ যেন প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ন্যায় গোাঁ পৃথ্বীকে গ্রাস করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে করোনার করুণ ছোবল। রক্তাক্ত নয়, নয় গোলা বর্ষণ, বুলেট কিংবা বিমান হামলাও নয়, তবু লক্ষ লক্ষ জীবন অনায়াসেই ঝড়ে অকালে মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পরছে। সুখ শান্তি বিলুপ্ত হয়েছে, গগনবিহারী শকুনের দর্শন দেখছে না, কুকুর ছিঁড়ে খাচ্ছে না মৃতদেহ। তবু ময়দান জুড়ে গণমানুষের প্রাণহীন সারি সারি কাফনের কাপড় প্রস্তরখণ্ডের মত ফুটে আছে। দেখে মনে হয় শ্মশানে ঠাঁই হয়েছে সমাজের সমস্ত মনুষের।