গল্পাখ্যানের বিসর্জনকালে নানামাত্রিক নিরীক্ষার গরল গিলতে সম্মত নন বলে প্রথম পাঠে খােকন কায়সারের গল্পসমূহকে প্রথাবদ্ধ মনে হতে পারে। মনােনিবেশে কার্পণ্য না ঘটলে পাঠকমাত্র বুঝতে পারবেন তিনি জীবনাখ্যানের প্রথায় নির্মোহ অথচ নিজে সেখানে বন্দি হতে রাজী নন মােটেই। নিরীক্ষার ঝলকানি না থাকলেও থােকন কায়সার গল্পে যে জীবন ও মানুষের কথা বলেন। সেখানে আবিষ্কারের আনন্দ পাওয়া যায়। সমতলের একদল মানুষের কথা-উপকথা থেকে শুরু করে পাহাড়ি জনপদের সংগ্রামশীল মানুষের জীবনযজ্ঞে তিনি সমান মনােযােগী। শৈশব কৈশাের যৌবন জীবনের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য তাঁকে করেছে কখনাে অন্তর্গত যােদ্ধা কখনও পরিব্রাজক। এ সবই একজন গল্পকারের জীবন। অন্বেষণের প্রমাণপত্র যা আমাদের গল্প মানচিত্রের সম্প্রসারণ ঘটায় নি:সন্দেহে। খােকন কায়সারের গল্পে আখ্যান মুখ্য হলেও আখ্যানের বহুস্তর অন্বেষণের একটা নিজস্ব ভঙ্গি রয়েছে। আঞ্চলিক শব্দের প্রতি তাঁর পক্ষপাত, প্রবাদ প্রবচনের আকছার সরল অথচ তীক্ষ্ণ ব্যবহারে এবং রূপকথাময় সহজিয়া টানের সঙ্গে লােকগাথা ও ঐন্দ্রজালিকবাস্তবতা মিশেলের দক্ষতা তাঁর প্রাতিস্বিকতাকে প্রতিষ্ঠিত করে। নিরীক্ষায় আগ্রহী অথচ মােগ্রস্থ নন বলেই প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘রাজার কবিলা’য় তিনি যে অনেক পথ হাঁটবেন তার পূর্বাভাস পাওয়া যায়।