বোঝা যায় বাঙালির ভাবীরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু কোনো কাঁচা কাজ করেননি, এমন ভাবনা কোনো সাময়িক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তাঁর মধ্যে সৃষ্টি হয়নি। তিনি ঠাণ্ডা মাথায় দীর্ঘ দুই দশকের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চিন্তাভাবনা করেই স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়েছেন। এ পথ যে ঝুঁকিপূর্ণ, পদে পদে এমন সব বিপদ ও প্রতিপক্ষের ফাঁদ থাকবে যা তাঁকে বড়ো রকমের বিপদে ঠেলে দিতে পারে - নির্ঘাত শারীরিক মৃত্যু অথবা দেশদ্রোহিতার কলঙ্ক মাথায় নিয়ে রাজনৈতিক অপমৃত্যুও হতে পারত পরিণতি । তা জেনেই তিনি দেশ ও মানুষের কথা ভেবে সেই বিপজ্জনক পথেই পা বাড়িয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ঝুঁকি নিলেন, তবে তার জন্য যতটা সম্ভব আঁটঘাট বেঁধে নিয়েছিলেন। তারই ফল হিসেবে আমরা পেয়েছি ছয়দফার মতো একটি অত্যন্ত সুচিন্তিত, সুপরিকল্পিত, দক্ষ কর্মপরিকল্পনার দলিল। এটি যেন ভাবীরাষ্ট্রের ভিত্তি পত্তনের কাজ করেছে। ... পুরো ষাটের দশক জুড়ে ছাত্রদের লাগাতার আন্দোলনের কথাও স্মরণ করতে হবে । তাদের ১১ দফা ছয়দফার পরিপূরক কর্মসূচি হয়ে উঠেছিল এবং বঙ্গবন্ধুও এটিকে গ্রহণ করেছিলেন। সত্তরের নির্বাচনি ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন ছাত্রদের এই দাবিনামা। এই প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু যে দৃঢ়তায় ষড়যন্ত্র মামলা মোকাবিলা করেছিলেন তাতে বাঙালি জাতি তাঁর মধ্যে এক অনন্যসাধারণ নায়ককে দেখতে পেয়েছিল যাঁর দৃঢ়তা ও অঙ্গীকার, সাহস ও ত্যাগের প্রত্যয় স্পষ্ট করে তুলেছিল ভিন্ন ধাতুতে গড়া এই নেতার সামর্থ্য। মানুষ তাঁর মধ্যে প্রকৃত নেতাকে খুঁজে পেল যিনি তাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে সক্ষম।'
মুহম্মদ নূরুল হুদা ১৯৪৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ সেকান্দর ও মাতা আঞ্জুমান আরা বেগম। মূলত কবি তিনি। তবে কথাসাহিত্য, মননশীল প্রবন্ধ ও অনুবাদসহ সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তিনি বিচরণশীল। অতিপ্রজ ও সব্যসাচী এই লেখকের স্বরচিত, অনূদিত ও সম্পাদিত গ্রন্থসংখ্যা শতাধিক। মুহম্মদ নূরুল হুদার প্রাপ্ত পুরস্কারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), যশোর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), আবুল হাসান কবিতা পুরস্কার (১৯৮৩), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কক্সবাজার পদক (১৯৮৯), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৪), আহসান হাবীব কবিতা পুরস্কার (১৯৯৫), যুক্তরাষ্ট্রের আই.এস.সি ঘোষিত পয়েট অব ইন্টারন্যাশনাল মেরিট ও পয়েট অব দ্য ইয়ার (১৯৯৫), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ কর্তৃক প্রদত্ত নজরুল জন্মশতবার্ষিকী সম্মাননা (১৯৯৯), জীবনানন্দ জন্মশতবার্ষিকী সম্মাননা (১৯৯৯), সুকান্ত পুরস্কার (২০০৪), একুশ-উনিশে ভাষা গৌরব শীর্ষক ত্রিপুরা রাজ্য সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সম্মাননা (২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১২) ইত্যাদি। ১৯৯৭ সালে তিনি তুরস্কের রাষ্ট্রপতি সুলেমান ডেমিরিল কর্তৃক বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হন। ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন। কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনা দিয়ে। তারপর বাংলা একাডেমিতে চাকরি বদল। এখানেই বিকশিত তাঁর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সময়। তিনি নজরুল ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব। বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের লেখকদের সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বর্তমান সভাপতি। তিনি আন্তর্জাতিক লেখক দিবসের প্রবক্তা। সাহিত্য-সাধনার পাশাপাশি সাহিত্য-সংগঠক হিসেবেও তিনি সর্বমহলে সমাদৃত।