"আকাশের গায়ে মাথা রেখে ঘুমন্ত পাহাড়গুলো প্রায়ই জেগে ওঠে অস্ত্রের ঝনঝনানি, নারী-শিশুর আর্তনাদ আর সম্ভ্রম হারানো যুবতীর উদোম গায়ের আগুনে। পাহাড় থেকে জুমের ফসলের মন উচাটন করা ঘ্রাণ আসে না, মাঝেমধ্যে ভেসে আসে ফসল ও ঘর পোড়া কয়লার বীভৎস গন্ধ। হঠাৎ করেই কোনো পাড়া থেকে হারিয়ে যায় যুবকেরা কিংবা যুবতীরা। তারপর যুবকদের মাথা বিহীন আর যুবতীদের উলঙ্গ লাশ ভেসে ওঠে সাঙ্গুর কিনারায়। বেশিরভাগ সময়ই চঞ্চলা নদীর স্বচ্ছ পানি লাল হয় নিরপরাধ মানুষের রক্তের রঙে।" সময়টা আশির দশকের শেষভাগ। স্বাধীন হওয়া নব্য বাংলাদেশ তখন নানাভাবে বিপর্যস্ত। সমতলে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পিচ ঢালা কালো পথ তরুণ-তরুণীদের বুকের রক্তে লাল হচ্ছে। আর পাহাড়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষেরা নিজেদের অধিকার আদায়ের লড়াইতে জীবন দিচ্ছে। স্বাধীন দেশেই শান্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনী মুখোমুখি লড়াইয়ে ব্যস্ত। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলও তখন চরমে। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন চরমপন্থী সংগঠনের নানান কাজকর্মে জনজীবন নাজেহাল। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজি নিত্যদিনের ঘটনা। এমন অস্থির সময়ে মানুষের অশান্ত জীবনেও প্রেম আসে, মানুষ ভালোবাসে। এই উপন্যাস প্রেমের ও যুদ্ধের। এই উপন্যাস যতটা মানবিকতার কথা বলে, ততটাই পাশবিকতার সাথেও পরিচয় করায়। এখানে ভালোবাসা- স্বার্থহীনতা-মায়া যেমন আছে, ঘৃণা-হিংসা-লোভও তেমন আছে। মানুষের জীবনের কিছু সময় সুখ ও শান্তির, কিছু সময় গর্ব ও নিজস্ব অধিকারের, আবার কিছু সময় যন্ত্রণা, অপ্রাপ্তি, হাহাকার ও কান্নার হয়, যা আমৃত্যু হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়। এমনই দ্বন্দমুখর ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, প্রেম-অপ্রেমের কিছু সময়কে এই উপন্যাসে শব্দে ধারণ করা হয়েছে।
মানুষের কর্ম ও চিন্তাভাবনার মধ্যেই আসল পরিচয় নিহিত বলে আফিফা পারভীন বিশ্বাস করেন। তাই তার লেখাই তার পরিচয় বলে তিনি মনে করেন। তবে সাধারণভাবে লেখক নিজেকে একজন মানবিকবোধসম্পন্ন মানুষ বলে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তার প্রথম বই 'এসো নীপবনে' প্রকাশিত হয়েছে একুশে বইমেলা ২০২১-এ। এরপর 'ফেরারি বসন্ত,' 'যাও পাখি বলো তারে,' 'বাতাসে বহিছে প্রেম,' 'শ্বেত পাথরের মালা,' 'কাচবন্দি ভালোবাসা' ও 'অ-তিথির অতিথি' প্রকাশিত হয়েছে। আফিফা পারভীন পড়তে ও লিখতে ভালোবাসেন। যতদিন পরম করুণাময় ইচ্ছে করবেন, ততদিন এই লেখক লিখে যেতে চান।