আমার অনেক শুভানুধ্যায়ীদের অনেক অনুপ্রেরণায় এবং আমার সুপ্রিয় বন্ধুবর বিশিষ্ট কবি ও ছড়াকার সুফিয়ান আহমদ চৌধুরীর একান্ত ইচ্ছায় এবং আমার খুবই স্নেহভাজন মোহাম্মদ অংকন’র ইচ্ছায় ও সহযোগিতায় আমার প্রথম ছড়াগ্রন্থ ‘সবুজ পাতায় রোদের ঝিলিক’ প্রকাশ করতে পেরে খুবই আনন্দিত। আমার এই ছড়াগ্রন্থটি মূলত প্রকৃতি নির্ভর। বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রকৃতির আলোকে আলোকিত করেই রচনা করার প্রয়াস নিয়েছি। এর একমাত্র কারণ হলো প্রকৃতি আমাকে খুবই কাছে টানে। আমি প্রকৃতিকে খুব ভালোবাসি। প্রকৃতিই আমার জীবনের সব। প্রকৃতির প্রতি আমার প্রগাঢ় ভালোবাসা বলেই প্রকৃতি আমাকে সহজেই আকর্ষণ করে। তাই প্রকৃতির মাধ্যমেই বিষয়সমূহকে ছন্দবদ্ধ করে তোলার চেষ্টা করেছি। এখানে আরও একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন যে, প্রকৃতিই হলো নারী। এই নারীকে বাদ দিয়ে তো আর কিছু করা যায় না। যে নারী আমাকে সবসময় আমার পাশে পাশে ছায়ার মতো থেকে আমার জীবনের সকল সাহিত্য চর্চায় সহযোগিতা করেছেন, তিনি হলেন আমার সহধর্মিনী কৃষ্ণা সূত্রধর। তাঁর অফুরন্ত সাহায্য ও সহযোগিতার করণেই এ পথে এতদিন ধরে আমার এত অগ্রসর হওয়া। তাঁর সাহায্য ও পরামর্শ পেয়েই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পেরেছি। আর আমার এই গ্রন্থ প্রকাশে সাহায্য করার জন্য দর্পণ প্রকাশকে জানাই কৃতজ্ঞতা। এর সঙ্গে আরও কৃতজ্ঞতা জানাই মোহাম্মদ অংকন’কে তাঁর একান্ত সহযোগিতার জন্য। তাঁর এত সাহায্য ও সহযোগিতা না পেলে হয়তো আমার গ্রন্থটি আলোর মুখ দেখতে পেত না। সর্বশেষে কৃতজ্ঞতা জানাই যিনি এই গ্রন্থের প্রচ্ছদ এঁকে দিয়ে আমাকে সর্বাঙ্গীণ সাহায্য করেছেন প্রচ্ছদশিল্পী শফিক মামুনকে। আমার এই গ্রন্থখানা যদি পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করতে পারে, তাহলেই আমার শ্রম সার্থক হবে। গোপেশচন্দ্র সূত্রধর লেখক
কবি ও ছড়াকার গোপেশচন্দ্র সূত্রধর ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৩রা আগস্ট সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলাধীন আসলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা-জীবন শেষ করে চুনারুঘাট দক্ষিণাচরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। শিক্ষকতা করাই ছিল তাঁর নেশা। তাই জীবনের প্রথমেই শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। পরবর্তীতে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি চাকরি হওয়ায় তাঁর একজন প্রিয় শিক্ষক (এই স্কুলেরই প্রাচীন শিক্ষক) সহিদ স্যারের অনুপ্রেণায় ও তাঁর চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামে গিয়ে যোগদান করেন। সেখান হতে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে সিলেটে বাংলাদেশ ব্যাংক হলে পরে সিলেট-এ বদলী হয়ে আসেন। দীর্ঘদিন চাকরিজীবন শেষ করে সিলেট শাখা থেকেই ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে ২০১০ খ্রিস্টব্দে ২রা আগস্ট অবসর গ্রহণ করেন। আজ তের বছর পার হয়ে গেল তাঁর অবসর-জীবন। তবে অবসরে গেলেও তাঁর জীবনে কোনো অবসর নেই। কারণ, লেখালেখির সুবাদে বই কিনতে কিনতে তাঁর মাতৃদেবী পুষ্পরাণী’র নামে ‘পুষ্প পারিবারিক গ্রন্থগার’Ñনামে একটি গ্রন্থাগার তাঁর বাসায় সৃষ্টি হয়েছে। এই গ্রন্থাগারেই বই পড়া আর লেখালেখি করেই এখন তাঁর অবসর-জীবন কাটছে। গোপেশচন্দ্র সূত্রধর-এর পারিবারিক পরিমন্ডলই ছিল ধর্মীয় সংস্কৃতির বাতাবরণে মোড়ানো। তাঁর বাড়িতে বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই থাকত। যারফলে তিনি ধর্মীয় ভাবগঙ্গার মধ্যদিয়েই গড়ে উঠেছেন। তিনি স্কুল-জীবনেই পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সাহিত্য, দর্শনসহ বিভিন্ন গ্রন্থাদি পাঠে খুবই অনুরক্ত ছিলেন। তিনি স্কুল-জীবনে স্কুলের লাইব্রেরী থেকে বই এনে পড়তেন। তাঁর অনিসন্ধিৎষু জ্ঞান পিপাসাই তাঁর এই পারিবারিক গ্রন্থাগার সৃষ্টি করেছে। তিনি বাল্যকালে ছিলেন অত্যন্ত নিভৃতচারী। তিনি সকলের অলক্ষ্যেই ছড়া, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি লিখতেন। এসবের পাশাপাশি ধর্ম-দর্শনের লেখালেখিও চলতে থাকে। বাংলাদেশের একমাত্র ধর্মীয় মুখপত্র মাসিক ‘সমাজ দর্পণ’ এ আজ দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে লিখে যাচ্ছেন। এর ফলশ্রুতিতে তাঁর এই ধর্মীয় ভাবধারা সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় সভা-সমিতিতে ধর্মীয় আলোচনা ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও বিশেষ অবদান রেখে আসছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন সৎ, কর্মঠ ও ন্যায়-নিষ্ঠ, ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। তাঁর সহধর্মিনী কৃষ্ণা সূত্রধর, বড় মেয়ে কল্যাণী সূত্রধর এবং ছোট মেয়ে ফাল্গুনী সূত্রধর এই নিয়েই তাঁর ছোট্ট সংসার।