পারস্য-বঙ্গের সম্প্রীতি-সংযোগ সহস্রাধিক বছরের। যে বন্ধন সীমিত নয় স্রেফ রাজনীতি, বাণিজ্য এবং ধর্মেই। বাংলায়, ভাষায় ও সাহিত্যে পারসিক কবি, প্রকৌশলী এবং শিল্পীদেরও রয়েছে অমোচনীয় প্রভাব। তাদের মনন-মেধা, সুর-চেতনা প্রবলে প্রতাপে বিস্তারিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তসহ অগণিত বাঙালি কবি-ভাবুকের কাব্যভাষায়। বাংলা ভাষার অপরিমেয় আলোকযাত্রায় মধ্যযুগের রাজভাষা ফারসি ক্রমান্বয়ে হয়ে উঠেছে সমাজ ও শিল্পীদের প্রাণিত করার সিলসিলা। মোহ¤ §দ বরকতুল্লাহ (১৮৯৮-১৯৭৪)। বঙ্গ সাহিত্যের নবজাগরণ যুগের যশস্বী লেখক। ছিলেন আধ্যাত্মিক আদর্শবাদে আস্থাশীল। দার্শনিক ভাবনাসমৃদ্ধ প্রথম আধুনিক বাঙালি মুসলিম প্রাবন্ধিকের শিরোপায় ভূষিত। পারস্য সাহিত্য ও পারস্যের অগ্রগণ্য কবিদের নিয়ে রচিত তাঁর মননশীল বিশ্লেষণাত্মক প্রবন্ধরাশি প্রকাশিত হয়েছিল ‘মোসলেম ভারত’, ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’ এবং ‘সওগাত’-এর মতো পত্রিকায়। দর্শনের কৃতী ছাত্র মোহ¤ §দ বরকতুল্লাহ কর্মজীবনে ছিলেন বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। ভাষা আন্দোলনের ফসল ‘বাংলা একাডেমি’র বিশেষ কমকর্তা হিসেবে প্রথম পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য ভূষিত হয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মানে। পারস্য প্রতিভা প্রকাশিত হয় দুখণ্ডে। ১৯২৪, ১৯৩২। রসস্থ বাঙালির চলার পথের সহায় ফিরদৌসী, রুমি, খৈয়াম, জামি, সাদি আর হাফিজের সঙ্গে উৎসুক বাঙালি পাঠকের সম্যক পরিচয়ের উদ্বোধন করেছেন মোহ¤ §দ বরকতুল্লাহ। আজ হতে শতবর্ষ পূর্বে। সুপ্রিয় পাঠক, ফারসি সাহিত্যের মিষ্টি-মধুর স্বাদ উপভোগের অনিঃশেষ রোমাঞ্চকর অভিযাত্রায় স্বাগত।