বন্ধুত্ব রিয়াদ আর রিফাত খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড। দু’জনেই একই ক্লাসে পড়ে। ক্লাস সেভেনের স্টুডেন্ট। একই গ্রামে দু’জনের বাড়ি। একজন আরেকজনকে ছাড়া যেনো চলতেই পারেন। মনে হয় ওরা যেনো সহোদর ভাই। গ্রামের শুরুতেই রিয়াদের বাড়ি আর শেষ মাথায় রিফাতে। রিয়াদ মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে। আর রিফাত কৃষক পরিবারের ছেলে। ধনী-গরীব বংশের উঁচু নিচুতা এসব মনের মাঝে কখনো দাগ কাটেনা তাদের। ক্লাসের অন্যানা বন্ধুরা মাঝে মাঝে আজেবাজে কথা বলে কিন্তু এসবের কোন পাত্তা দেয়না তারা। যেকোন সময় রিয়াদের বাড়িতে রিফাত গেলে শাক শুটকি যাই থাকুক প্লেট নিয়ে বসে পড়ে। তেমনি রিফাতও রিয়াদের বাড়িতে গেলে সেইম কাজটাই করে। ওদের মধ্যে ভালোবাসা আর আত্মবিশ্বাসের কোন কমতি নেই। একদিন রিফাতের খঘের ঝুপেকে যেন প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। তখন আর্থিক অনটনে পড়ে যায় রিফাতের বাবা। রিফাতকে স্কুলের বেতন দিতে পারছেন না তিনি। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। বন্ধুর এই অসহায় অবস্থা দেখে রিয়াদ নিজের জমানো টিফিনের টাকা মাটির ব্যংকে জমিয়েছিল তা ভেঙ্গে দেখে অনেকগুলো টাকা হয়েছে তা থেকে স্কুলের বেতন ও পরীক্ষার ফি দিয়ে বাকি যা টাকা ছিল তা দিয়ে গরুর খাবারের খুড়কুটু কিনে দিয়েছে। রিফাত প্রথমে নিতে চায়নি পরে রিয়াদ বলল তুই যদি আমার জায়গায় থাকতি তাহলে তুই আমার মতো এই কাজটাই করতি। তখন আমি মনে কিছু নিতাম না। কারো বিপদে পাশে থাকার নামই বন্ধুত্ব। তারপর রিফাত আর কোন আপত্তি করেনি। আরেকদিন দু’জন মিলে স্কুলে যাচ্ছে। রিয়াদের সাইকেলে চড়েই সবসময় আসা যাওয়া করে দু’জন। সামনে থেকে ব্রিজের উপড়ে হঠাৎ একটা মোটরবাইক এসে সাইকেলে প্রচন্ড গতিতে লাগিয়ে দিল। রিয়াদ রিফাত সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে গেলো ব্রিজের নিচে। রিফাত মাটিতে পড়ে গেলো। তার হাত পা ছিলে গেছে। এদিকে রিয়াদের মাথাটা ব্রিজের কোনায় আঘাত পেয়ে মারাত্মক জখম হলো। রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেলো চারপাশ। রিফাত নিজেকে সামলে দৌঁড়ে এল রিয়াদের কাছে। নিজের জামাটা খুলে রিয়াদের মাথাটা শক্ত করে বেঁধে নিল। এদিকে রিফাত চিৎকার করতে লাগলো বাঁচাও বাঁচাও বলে। আশে পাশে মানুষ জমায়েত হলো। তারপর একটা সিএনজি করে রিফাত তার বন্ধুকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। খবর শুনে রিয়াদের বাবা, মা হাসপাতালে গেলো। ডাক্তার বললো ইমারজেন্সি অপারেশন করা লাগবে। মাথা প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এবং দুই ব্যাগ এ পজেটিভ রক্ত লাগবে আর্জেন্ট। রিয়াদের বাবা তো দিশেহারা হয়ে গেলো। এদিকে রিফাতেরও বেশ রক্তক্ষরণ হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছিলে গেছে, কেটে গেছে। রিফাত নিজের দিকে খেয়াল না রেখে বন্ধুকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলো। ডাক্তারকে বললো আমার শরীরের সমস্ত রক্ত নিয়ে হলেও রিয়াদকে বাঁচান। ডাক্তার সাহেব রক্তের গ্রæপ পরীক্ষা করে দেখল তারও এ পজেটিভ রক্ত। কিন্তু রিফাতের শরীর থেকেও যে পরিমান রক্ত ঝরেছে তারপর আর রক্ত নেয়াটা রিক্স হয়ে যাবে। ডাক্তার প্রথমে নারাজ হলেও রিফাতে আকুতি মিনতির জন্য দুই ব্যাগ রক্ত নিতে বাধ্য হলো। রিফাত রিয়াদকে দুই ব্যাগ রক্ত দিয়ে দুই দিন অজ্ঞান অবস্থায় ছিল। তাকে সেলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে কোন রকম বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। তারপরও রিফাত একমাস বেড রেস্ট সহ ডাক্তারের সাজেশন মতো পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হয়েছে নিয়মিত। একমাস অসুস্থতার পর রিফাত সুস্থ হয়ে উঠলো। কিন্তু রিয়াদের সুস্থ হতে আরও তিন মাস সময় লাগবে। ডাক্তার বলছে বাড়িতে স¤পূর্ণ রেস্ট থাকতে হবে। এদিকে সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। রিয়াদ স্কুলে যেতে পারে না। রিফাত একা একা স্কুলে যায় এবং কঠিন সাবজেক্টগুলো প্রাইভেট পড়ে। নিজের স্কুল এবং প্রাইভেট শেষ করে সোজা চলে আসে রিয়াদের বাড়িতে। রিফাত সারাদিন যা পড়াশোনা করেছে রিয়াদকে তা আস্তে আস্তে বুঝিয়ে দেয়। রিয়াদ যতদিন অসুস্থ ছিল ততদিন পর্যন্ত রিফাত তাদের বাড়িতে যায়নি। একমাত্র স্কুলে যাওয়া পড়াশোনা করা এবং রিয়াদের সেবা করা পাশাপাশি রিয়াদকে শিখিয়ে দেওয়ার দায়িত্বটা সে নিজের কাঁধেই নিয়ে নিয়েছে। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর রিয়াজ সুস্থ হয়ে উঠলো। রিয়াদ সুস্থ হওয়ার এক মাস পরে তাদের ফাইনাল পরীক্ষা চলে এলো। রিফাত নিজের পড়াশোনা সহ রিয়াদের যত ঘাটতি ছিল সবকিছুতেই সহযোগিতা করলো। ফাইনাল পরীক্ষা শেষে দেখা গেল দুই বন্ধুই খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। রিয়াদ আরিফাতের পরিবারের মধ্যে আনন্দের সীমা নেই। আসলে এমন বন্ধুত্ব প্রতিটি ঘরে ঘরে থাকা উচিত। এমন বন্ধুত্ব মৃত্যু অবধি বেঁচে থাকে অনায়াসে অটুুট বন্ধন হয়ে। এর নামেই বন্ধুত্ব এর নামই ভালোবাসা।