"ছোটদের বাংলা লেখার নিয়ম" বইটির 'বন্ধুরা, তোমাদের জন্য কিছু কথা' অংশ থেকে নেয়াঃ বাংলা বানান বিষয়ে তােমাদের জন্য লেখা এ বইটি পড়ার আগে কিছু ধারণা সম্বন্ধে কথা বলা দরকার। ভাষাকে কিন্তু আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না; ব্যাখ্যা করি মাত্র। যেমন খেলার ভাষ্যকার খেলার পদ্ধতি বলে দেন না; খেলার পরিস্থিতি বর্ণনা করেন মাত্র। মনে রাখতে হবে, আগে ভাষা, তারপর ভাষা প্রয়ােগের নিয়মাবলি। ব্যাকরণ ভাষাকে বিশ্লেষণ করে। আর বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হয়তাে পেয়ে যায় কিছু সূত্র বা নিয়ম। পৃথিবীর যে-কোনাে ভাষার, যে-কোনাে দেশের মানুষকে জানতে হয় তার ভাষার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সামর্থ্য। বাংলাভাষী মানুষের জন্যও এ কথা অপরিহার্য। প্রমিত বানান যে-কোনাে ভাষার মর্যাদা এবং সামর্থ্য বৃদ্ধি করে বহুগুণ। প্রমিত ভাষারীতিও নির্ভর করে ওই ভাষার প্রমিত বানানের ওপর। বানান যেহেতু ভাষা-লেখন প্রণালী, তাই প্রতিটি শব্দের জন্য দরকার একটি সুস্থিত বর্ণবিন্যাস। বাংলা বানানকে স্থিতি প্রদানের জন্য অনেকদিন থেকে চেষ্টা চলেছে ও চলছে। অন্যদিকে তেমনি চলছে বানানের বিধিবদ্ধ নিয়ম-মানার প্রবণতা, কিছু অপচেষ্টা আর স্বেচ্ছাচারিতা। টেকস্ট বুক বাের্ড প্রণীত বানানের নিয়ম, বিভিন্ন সাময়িকপত্রের প্রস্তুতকৃত ও অনুসৃত বানানরীতি, দেয়াল-লিখন, দোকানের নামফলক, টেলিভিশন, ব্যক্তি-লেখক বিশেষে আলাদা আলাদা বানান-স্টাইল আর অসাবধানতাবশত বানান-বিভ্রান্তি বর্তমানে বাংলা বানানের প্রমিতকরণে বড় প্রতিবন্ধকতা। বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। বাংলা সাহিত্য আমাদের প্রাণের কথা প্রকাশের প্রধান ক্ষেত্র। বাংলার ঐতিহ্য আমাদের গৌরবের বিষয়-আশয়। বাংলা, আমাদের রাষ্ট্রভাষা, মাতৃভাষা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আজ এ ভাষার অস্তিত্ব ও মর্যাদা রক্ষার লড়াই স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত। অবহেলা, উদাসীনতা, ব্যাকরণভীতি আর অতিমাত্রায় ইংরেজিপ্রীতির কারণে মাতৃভূমি আর মাতৃভাষার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবােধ এবং দায়িত্ববোেধ কমে আসছে। বানান-সংকট আর উচ্চারণ-বিভ্রাট আজ আমাদের অন্যতম জাতীয় সমস্যা। প্রমিত বাংলা বানান সর্বস্তরে প্রচলনের জন্য দরকার শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ। আরেকটি কথা, জাতি কিংবা ব্যক্তিকে বড় হতে হলে অবশ্যই ভাষা, গণিত আর প্রযুক্তিতে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হতে হয়। আর তাই, ভাষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার- বানান সম্বন্ধে তােমাদেরকে প্রয়ােজনীয় কিছু ধারণা দেওয়ার ইচ্ছা থেকেই এ বইটির পরিকল্পনা।