"ক্যাঙ্গারু দেখার শ্রেষ্ঠ দিন এবং অন্যান্য অনুবাদ গল্প" বইয়ের কিছু কথা: বাছুর মরে গেলে তার চামড়া দিয়ে মূর্তি বানিয়ে গাভীর সামনে রাখা হয় যাতে বিভ্রান্ত গাভী অন্তত দুধ দেয়া অব্যাহত রাখে। অনুবাদ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ সে প্রসঙ্গটি টেনে এনেছিলেন। অমিয় চক্রবর্তীকে পাঠানাে একটি চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, অনুবাদ মরা বাছুরের মূর্তি, তাতে আহবান নেই, ছলনা আছে। ছােটগল্প আমার নিজের কাজের ক্ষেত্র। নিজের মৌলিক গল্প লেখা যখন স্থগিত থেকেছে তখন অন্তত গল্প লেখার আনন্দটিকে চাঙা রাখতে মাঝে মাঝে সেই ছলনার আশ্রয় নিয়েছি। অনুবাদ করেছি বিশ্বসাহিত্যের আমার পছন্দের কিছু লেখকের গল্প। বিভিন্ন সময়ে করা সেই অনূদিত গল্পের কয়েকটি সংকলিত হলাে এই বইয়ে। নানা দেশের নানা স্বাদের গল্প । জাপানি হারুকি মুরাকামির গল্পের অনিকেত মানুষ, আর্জেন্টিনার আবেলারদো কাস্তিলের গল্পে ল্যাটিন আমেরিকার চমক, চেক অভিবাসী লেখক মিলান কুন্ডেরার গল্পে রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে চাপা কৌতুক, ম্যাক্সিকান ওক্টাভিও পাজের গল্পের পরাবাস্তব জগৎ, আর তুর্কি ওরহান পামুকের গল্পে ইস্ত স্কুিলের আটপৌরে পারিবারিক আনন্দ, বিষাদ। স্মরণে রাখা ভালাে যে নিজের লেখা অনুবাদ করে রবীন্দ্রনাথও ছলনার আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে বিশ্ববাসীর পক্ষে তার লেখার স্বাদ নেয়ার সুযােগ ঘটেছিল।
Title
ক্যাঙ্গারু দেখার শ্রেষ্ঠ দিন এবং অন্যান্য অনুবাদ গল্প
সমসাময়িক বাংলা কথাসাহিত্যে মননশীল সাহিত্যিক হিসেবে শাহাদুজ্জামানের অবস্থান অনন্য ও অগ্রণী। গল্প, উপন্যাসেই বেশি পরিচিত হলেও শাহাদুজ্জামানের উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে প্রবন্ধ, অনুবাদ, ভ্রমণ এবং গবেষণার ক্ষেত্রেও। লেখকের মতে, তিনি আল বেরুনীর মতো দীর্ঘ নয়, বরং বিস্তৃত জীবনের আকাঙ্ক্ষা করেন। ১৯৬০ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন কথাশিল্পী শাহাদুজ্জামান। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করেন মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রকল্পে। উচ্চতর শিক্ষার জন্য পরবর্তীতে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং নেদারল্যান্ডসের আমস্টার্ডাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে শাহাদুজ্জামান দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ বিভাগে। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও গবেষণা কাজের সাথে যুক্ত রয়েছেন। পারিবারিকভাবে সাহিত্যের যে ঘোর শৈশবেই আচ্ছন্ন করেছিলো তা-ই শাহাদুজ্জামানের সাহিত্যিক হয়ে ওঠার পাথেয় হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৯৬ সালে মাওলা ব্রাদার্স আয়োজিত কথাসাহিত্যের পান্ডুলিপি প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়ে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম ও ছোটগল্পগ্রন্থ ‘কয়েকটি বিহ্বল পাখি’। শাহাদুজ্জামান এর বই সমূহ ঠিক প্রচলিত উপন্যাসের গৎবাঁধা আঙ্গিকে ধরা যায় না। অনেক সাহিত্যবোদ্ধা তাই তাঁর লেখাকে ফিকশন-নন ফিকশন, পদ্য-কথাসাহিত্য, সবকিছুর মিশেলে ‘ডকু ফিকশান’, আবার অনেকে ‘মেটাফিকশান’ বলে রায় দিয়ে থাকেন। শাহাদুজ্জামান এর বই সমগ্র এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্রাচের কর্নেল, আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে, একটি হাসপাতাল একজন নৃবিজ্ঞানী কয়েকটি ভাঙ্গা হাড়, ক্যাঙ্গারু দেখার শ্রেষ্ঠ দিন এবং অন্যান্য অনুবাদ গল্প, কয়েকটি বিহ্বল গল্প, মামলার সাক্ষী ময়নাপাখি, কাগজের নৌকায় আগুনের নদী, এবং কবি জীবনানন্দ দাশের উপরে লেখা উপন্যাস ‘একজন কমলালেবু’। কমলা রকেটসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও রচনা করেছেন শাহাদুজ্জামান। ২০১৬ সালে বাংলা কথাসাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পান বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার।