ভূমিকা দি স্টা লাইক ডাস্ট উপন্যাসটি আইজ্যাক আজিমভের গ্যালাস্টিক এম্পয়ার সিরিজের একটা বই। তাঁর অসংখ্য সায়েন্স ফিকশন গ্রন্থের মধ্যে এটা অন্যতম। আজিমভের গল্প অনুবাদ করতে গিয়েই টের পেয়েছি যে তিনি কখনোই বিজ্ঞানকে গল্পের উপরে নিয়ে যাননি। অথচ নির্দ্বিধায় সেটি উৎকৃষ্ট সায়েন্স ফিকশন।আর সেটাই একজন সাহিত্যিকের মুনশিয়না। আজিমভের সায়েন্স ফিকশন গল্পে যেমন থাকে একটা সরল অথচ নতুন আঙ্গিকে বৈশিষ্ট্য মোড়ানো কাহিনী, তেমনি গতিশীল ভাষার সহজ বুনন। আবার উপন্যানের সেই কাহিনীর নুতনত্ব থাকলেও ,ভাষার কারুকাজ এতে নতুন এক মাত্রা যুক্ত করে। উপন্যাসে তার বাক্য গঠনের মুনশিয়ানা , বা কোথাও কোথাও বলা যায় নতুনত্ব , এক ভিন্ন স্বাদ এনে উপস্থিত করে পাঠকের কাছে। বিজ্ঞান প্রিয় পাঠকদের পছন্দ সায়েন্স ফিকশন, অথচ আজিমভের পাঠক নির্বিচারে সবাই। তাঁর বাংলায় অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যাই এ প্রমাণ। এ গেল বইয়ের কথা । এবার কিছু নিজের কথা বলি । উপন্যাস অনুবাদ বেশ জটিল একটা কাজ। এর পাত্র পাত্রী ,প্রেক্ষাপট সমস্ত কিছুর সাথে ভালো করে পরিচয় না থাকলে অনেক কিছুর বোঝা দুষ্কর হয়ে পড়ে । কিন্তু কেউ হয়তো বলতে পারে সায়েন্স ফিকশনের প্রেক্ষাপট আবার বোঝার কী আছে? সে তো অনেক বছর পরের ঘটনা। কিন্তু লেখা সব সময় লেখকের আশপাশের সমাজের প্রতিচ্ছবি, এমনকি সায়েন্স ফিকশন হলেও। আর এই উপন্যাস বেলাতেও সেটা খাটে। তবে আমার জন্য কঠিন অন্য কারণে ,তা হল অলসতা। তারপরও অনুবাদ কর্মটি শেষ হয়েছে একজনের প্রবল উৎসাহে। তিনি হলেন হাসান খুরশীদ রুমী।তাঁর অনবরত তাগাদায় (যা শুধু সায়েন্স ফিকশনের প্রতি ভালোবাসার কারণে) একদিন এটা শেষ হয়েছে। আর তাই এর জন্য যদি কোনো প্রশংসা থাকে তা রুমীর প্রাপ্য, আর দোষত্রুটি যা কিছু তার ধিক্কার আমার জন্য। সায়েন্স ফিকশন আরো একটা সাহসী পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদের দাবিদার প্রকাশক আরিফুর রহমান নাইম। সাজ্জাদ কবীর পান্থপথ,ঢাকা।
বিংশ শতকের অন্যতম সেরা লেখক আইজ্যাক আসিমভ সাহিত্যজগতের এক উজ্জ্বল নাম। তিনি ১৯২০ সালের ২ জানুয়ারি সোভিয়েত রাশিয়ার পেত্রোভিচি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের সাথে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ব্রুকলিনে শুরু করেন নতুন জীবন। ছোটবেলায়ই তাঁর বাবা তাকে লাগিয়ে দেন নিজেদের ক্যান্ডিশপে দোকানদারির কাজে। ছোট্ট আসিমভ পাঁচ বছর বয়সেই নিজে নিজে পড়তে শিখে যান। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি হাই স্কুল শেষ করেন এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি ১৯৩৯ সালে ব্যাচেলর অব সায়েন্স এবং পরবর্তীতে এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে তিনি বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি হলেও তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে নিয়মিত শিক্ষকতা করেননি। ১৯৫০ সালে বের হয় তাঁর প্রথম বই ‘পেবলস ইন দ্য স্কাই’, যা জয় করে নেয় সাধারণ পাঠকের মন। এরপর একের পর এক লেখা বের হতেই থাকে তাঁর। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের মূল আধেয় হলো সায়েন্স ফিকশন, পপুলার সায়েন্স, রহস্য ইত্যাদি। সৃজনশীল মেধাসম্পন্ন এই লেখক ৫০০টিরও বেশি বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। জনপ্রিয় লেখক আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমূহ হলো, ‘আই,রোবট (১৯৫০)’, ‘ফাউন্ডেশন (১৯৪২)’, ‘দ্য এন্ড অব ইটারনিটি (১৯৫৫)’, ‘দ্য কেভস অব স্টিল (১৯৫৩)’, ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজ (১৯৬৬)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত উপন্যাসই শুধু নয়, তুমুল জনপ্রিয় তাঁর ছোটগল্পগুলোও। আসিমভ এর রচনাগুলো থেকে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্র, যার মাঝে আছে ‘আই,রোবট (২০০৪)’, ‘বাইসেন্টেনিয়াল ম্যান (১৯৯৯)’ ইত্যাদি। বিশ্বজোড়া প্রকাশিত আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমগ্র জয় করে নিয়েছে সায়েন্স ফিকশন পাঠকদের মন। তাঁর বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের নামিদামী পরিচালক তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র, বানিয়েছেন সিরিজ। ১৯৮৭ সালে ‘সায়েন্স ফিকশন রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ তাকে ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অব সায়েন্স ফিকশন’ সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর লেখা ‘ফাউন্ডেশন (ট্রিলজি)’ ১৯৬৬ সালে এনে দেয় ‘হুগো এওয়ার্ড’, ‘দ্য গডস দেমসেল্ভস’ এনে দেয় একইসাথে ‘হুগো’ ও ‘নেবুলা’ অ্যাওয়ার্ড। কল্পবিজ্ঞানের এই মহা কারিগর ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল ব্রুকলিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।