উনিশ শতকে বাঙালির জাতীয় জাগরণের ভিত্তিভূমি বাংলাভাষা। বাংলাভাষাকে আশ্রয় করে যে নবচেতনা ও বোধের উন্মষ ঘটেছে তাতে বাংলা ভাষার বিচিত্র ও ত্বরিত বিকাশ ছাড়া সংস্কৃতি, সমাজ ও রাজনীতির ক্ষেত্রে এসেছে নতুন চঞ্চলতা। অবশ্যি ভাষাকেন্দ্রিক জাতীয়তা ও দেশাত্মবোধের যে আধুনিক বোধ তা সম্পূর্ণরূপে উনিশ শতকের ইউরোপীয় শিক্ষার স্পর্শসঞ্জাত প্রভাব বললে হয়তো সত্য বলা হবে, কিন্তু তার চাইতে সত্য আমরা লক্ষ করব বাংলাভাষার প্রতি বাংলা ভাষাভাষীদের প্রীতি, মমত্ব ও শ্রদ্ধা পঞ্চদশ, ষোড়শ, সপ্তদশ শতাব্দীতেও আমরা বিস্তৃত দেখি। তখন হয়ত জাতি, দেশ, সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জটিল কোনো মধ্যবিত্তসুলভ ধারণা ছিল না। কিন্তু ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভাষাপ্রীতির যে দৃষ্টিভঙ্গি তাতে আমরা লক্ষ করি তাতে দেখি বাংলাভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা। পঞ্চদশ শতাব্দীতে যখন সংস্কৃত রামায়ণ মহাভারতের বাংলা অনুবাদ হচ্ছিল সেই অনভিজ্ঞ ও অপরিজ্ঞাত ভাষা নির্মাণের সময়েও কবি কৃত্তিবাস মনে করেছিলেন মূলত 'লোক বুঝাবার' জন্যই কাব্য- সাহিত্য। এ শতকে শাহ মোহাম্মদ সগীর লোক-নিন্দা, দোজখের ভয় ইত্যাদি উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের নৈমিত্তিক বাংলাকে তঁর কাব্যের আকর করেছিলেন। মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আলাওলও তাই করেছিলেন।
ষাটের দশকের স্বল্পপ্রজ নেপথ্যচারী সাহিত্যকর্মী শফিউল আলম ১৯৬২ সনে চট্টগ্রামের দৈনিক ইনসাফ' পত্রিকায় সাব এডিটর হিসেবে প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন। এসময় তিনি পাক্ষিক ‘দুপাতা' পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৬৬ সনে তিনি সাহিত্য সাময়িকী পৰ্বপত্র’ সম্পাদনা করে সৃজনশীল তরুণ সাহিত্যিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বাংলা একাডেমীসহ বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গবেষণামূলক ও সৃজনশীল গ্রন্থ। গ্রন্থগুলাে হল- সাহিত্যের কালােত্তীর্ণ কুশীলব, প্রসঙ্গ: সাহিত্য-কতিপয় বিবেচনা, মহীউদ্দীন, সাংবাদিক সাহিত্যিক মােহাম্মদ আব্দুর রশিদ সিদ্দিকী, মােতাহের হােসেন চৌধুরীর নির্বাচিত প্রবন্ধ (ভূমিকা সংবলিত) ইত্যাদি। শফিউল আলম ‘শিশু বিশ্বকোষ ও এশিয়াটিক সােসাইটি কর্তৃক প্রকাশিতব্য বিশ্বকোষ ‘বাংলা পিডিয়ার অন্যতম ভুক্তিলেখক। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে চাকুরিকালে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ, যশাের সরকারি মহিলা কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে নিয়ােজিত ছিলেন । তিনি ফেনী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও চাদপুর সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ও চট্টগ্রামের সরকারি পটিয়া কলেজে শিক্ষকতা করেন।